Calcutta High Court

Justice Abhijit Ganguly: যার উপর এত ভরসা, সেই সিবিআই নিয়েই হতাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! কী এমন ঘটল...

মন্ত্রীকন্যার চাকরি খোয়ানো থেকে শুরু করে ৭৬ বছরের প্রৌঢ়ার বকেয়া বেতন দেওয়ার নির্দেশ— বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পরিচিত ‘জনগণের বিচারপতি’ হিসেবে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২২ ১৪:৩০
Share:
০১ ২২

একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে এক নির্দেশে পাঠিয়েছেন সিবিআই দফতরে। কিন্তু সেই সিবিআই তদন্তেই খুশি নন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বলছেন, ‘‘এর থেকে সিট-ই ভাল ছিল।’’

০২ ২২

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হাই কোর্ট পাড়ায় আপাতত সবচেয়ে আলোচিত এই বিচারপতির নাম-ই। এসএসসি মামলায় রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার চাকরি খোয়ানো থেকে শুরু করে ৭৬ বছরের প্রৌঢ়ার সিকি শতকের বকেয়া বেতন দেওয়ার নির্দেশ— হাই কোর্ট পাড়ায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পরিচিত জনগণের বিচারপতি হিসেবে।

Advertisement
০৩ ২২

২০১৮-র ২ মে কলকাতা হাই কোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২০-র ৩০ জুলাই হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।

০৪ ২২

এর আগে ১০ বছর তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেই সময়ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছিলেন অভিজিৎ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ন্যাশনাল ইন্সিওরেন্সের মামলা।

০৫ ২২

তবে পেশাদার জীবনের একেবারে শুরু থেকেই আইন-জগতে ছিলেন না অভিজিৎ। প্রথমে ছিলেন সরকারি চাকুরে। কিন্তু সেখানে মন না টেকায়, আইন পড়া শুরু।

০৬ ২২

আপাতত শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার বিচার করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার আগে তিনি কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়ের মামলার বিচারপতি ছিলেন।

০৭ ২২

সেই সময়ও তাঁর দেওয়া বিভিন্ন রায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বিচারপ্রার্থীদের সহায় হয়েছিল।

০৮ ২২

কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ মামলার বিচার করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতার স্কুল শিক্ষকের চাকরি খোয়ানো এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।

০৯ ২২

তবে শুধু এসএসসি-ই নয়, শিক্ষা সংক্রান্ত আরও একাধিক মামলায় রায় দিয়েছেন তিনি। হাই কোর্ট পাড়ায় তাঁকে অনেক বিচারপ্রার্থীই ‘জনগণের বিচারপতি’ নামে ডেকে থাকেন।

১০ ২২

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মানবিক রায়’-এর অন্যতম উদাহরণ ৭৬ বছরের শ্যামলী ঘোষের মামলা। রায় বেরোনোর পর এজলাসেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সত্তরোর্ধ্ব শ্যামলী দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন বিচারপতিকে।

১১ ২২

ক্যানসার আক্রান্ত অধস্তন শিক্ষিকার ১২ দিনের বেতন কেটে নেওয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ কেড়ে নিয়েছিল হাই কোর্ট। সেই মামলাতেও বিচারপতির চেয়ারে ছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই। একই সঙ্গে বকেয়া ইনক্রিমেন্টও দ্রুততার সঙ্গে মিটিয়ে দিতে বলেন তিনি।

১২ ২২

এসএসসিতে নিয়োগের দাবিতে ধর্মতলা চত্বরে আন্দোলনরত ক্যানসার আক্রান্ত সোমাকে ব্যক্তিগত ভাবে এজলাসে ডেকে পাঠিয়ে বিকল্প চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

১৩ ২২

সোমা বিচারপতির প্রস্তাব মেনে বিকল্প চাকরি নিতে রাজি হননি। কিন্তু এজলাসে দাঁড়িয়েই বলে এসেছিলেন, ‘‘স্যর, আপনি আমাদের মতো আন্দোলনকারীদের কাছে আশার আলোর মতো। এটা শুধু আমাদের লড়াই নয়, আপনিও আছেন আমাদের সঙ্গে। এটা ভেবেই আমাদের ভাল লাগে।’’

১৪ ২২

চাপের মুখেও দায়িত্বে অবিচল থাকার মানসিকতা দেখিয়েছেন বার বার। সাম্প্রতিক সময়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের ডাক দিয়ে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একটি অংশ বিক্ষোভ করছিলেন। তা দেখে বিচারপতি বলেন, “মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। মারতে পারেন। মরতে রাজি আছি। কিন্তু দুর্নীতি দেখলে চুপ করে থাকব না। আওয়াজ তুলবই।”

১৫ ২২

তবে বিতর্কেরও অবকাশ রয়েছে বিলক্ষণ। সম্প্রতি তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর দেওয়া সব রায়ে কেন স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে? যা হাই কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

১৬ ২২

সম্প্রতি স্কুলে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের কয়েকটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই অনুসন্ধানের মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

১৭ ২২

শিক্ষক নিয়োগ মামলায় এসএসসি-র তৎকালীন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেবনিকেশ চেয়েছিল বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। সেই নির্দেশেও ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

১৮ ২২

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবকে চিঠি দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোককুমার দেব। অশোকের বক্তব্য ছিল, হাই কোর্টের মধ্যে বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ না রেখে স্কুল নিয়োগ মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর প্রশাসনিক নির্দেশে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে উপেক্ষা করে।

১৯ ২২

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে দাঁড়িয়েই সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে। আদালতের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপের পর অবমাননার দায় থেকে মুক্ত হন সভাপতি।

২০ ২২

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই মামলায় মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আপনাকে অপমান করার কোনও উদ্দেশ্য আদালতের নেই। কিন্তু আপনি আদালতের নির্দেশ মানেননি। তাই এই পদক্ষেপ। আপনি ল’কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তার পরও আইনকে অবহেলা করেছেন?’’ শুনানির পর পর্ষদ সভাপতি বলেছিলেন, ‘‘আদালত সন্তুষ্ট। আমিও অবমাননার দায় থেকে মুক্ত।’’

২১ ২২

একটি মামলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক শিক্ষকের বেতন আটকে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, ওই প্রধান শিক্ষককে ১০ জুন পর্যন্ত স্কুলে ঢোকাই বারণ। স্কুলের প্রধান দরজায় দু’জন অস্ত্রধারী পুলিশকে মোতায়েন রাখার নির্দেশ দেন।

২২ ২২

হাই কোর্ট পাড়ায় বিচারপ্রার্থীরা বলেন, আইনের গণ্ডির মধ্যে থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি’, তাঁদের আইন ব্যবস্থায় বিশ্বাসকে আরও পোক্ত করেছে। আবার কেউ কেউ বলেন, আইনি দীর্ঘসূত্রিতার ফাঁস কাটিয়ে দ্রুত সুবিচার দিতেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জুড়ি মেলা ভার! সব মিলিয়ে, এই মুহূর্তে রাজ্যে অন্যতম চর্চিত চরিত্র বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement