— প্রতীকী চিত্র।
সংগঠনটি অরাজনৈতিক। কিন্তু তার নির্বাচন যেন কার্যত রাজনীতির লড়াই! চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার আগামী দুই বছরের কমিটি কোন রাজনৈতিক দলের কোন ‘লবি’র দখলে থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, লড়াইটা এখন তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। ২০২২ সালে আইএমএ কলকাতা শাখার নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলেরই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে রাস্তায় মারপিট হয়েছিল।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি চিকিৎসকদের কাছে ব্যালট পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যালট জমা দিতে হবে। তার দিন কয়েক পরে ঘোষণা হবে ফলাফল। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, শাসক দল যে ভাবে অন্য ভোটে বিভিন্ন রকম কৌশল কাজে লাগায়, এখানেও তা শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, আর জি কর-কাণ্ডের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এবং ২০২৫-এর পুরসভা ও ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে এই নির্বাচন অনেকটাই রাজনীতির ‘টেস্ট ম্যাচ’।
যদিও ক্ষমতাসীন চিকিৎসকেরা প্রকাশ্যে দাবি করেন, আইএমএ অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু শেষ ১২ বছরে ওই সংগঠনের রাজ্য, কলকাতা ও জেলা শাখা যাঁদের দখলে রয়েছে, তাঁদের অধিকাংশেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। বেশির ভাগই অবশ্য শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। তবে সিনিয়র চিকিৎসকদের অনেকে এটাও বলছেন, ২০১২-র আগে আইএমএ ছিল বামপন্থী চিকিৎসকদের দখলে। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে ওই সংগঠন চলে আসে শাসক দলের দখলে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১২ থেকে আইএমএ-র রাজ্য শাখায় কখনও নির্মল মাজি, শান্তনু সেন, এম এ কাশেমের মতো তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতারা সভাপতি পদে থেকেছেন।
তৃণমূলপন্থী সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেককেই আর জি করের আন্দোলনে সরব হতে দেখা গিয়েছিল। একই রকম ভাবে রাজ্যে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বেনিয়মে শাসক দলের মদতের অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে বিরোধী গোষ্ঠীর চিকিৎসকদের। যাঁদের বেশির ভাগ বামপন্থী। কয়েক জন অবশ্য গেরুয়া শিবিরেরও সদস্য। সেই পরিস্থিতিতে আইএমএ-র রাজ্য শাখার নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় ছাপ অনেকটা স্পষ্ট। যেমন, আর জি কর আবহে সংগঠনের নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হবেন না বলে ঘোষণা করেছিলেন শান্তনু। সূত্রের খবর, আর জি কর আন্দোলনে বাম ও অতিবাম সংগঠনের সক্রিয়তা বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে ফের প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করেন তৃণমূলপন্থী ডাক্তারদের একাংশ। তিনি ফের সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন।
শাসক দলের একাধিক পদাধিকারী প্রার্থী হয়েছেন। যেমন, সহ-সভাপতি পদে কলকাতা পুরসভার পুরপ্রতিনিধি মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়, হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক পদে বারাসতের পুরপ্রতিনিধি বিবর্তন সাহা, সহ-সম্পাদক পদে তৃণমূল যুব সংগঠনের সম্পাদক অনির্বাণ দলুই, রাজীব বিশ্বাস এবং কোষাধ্যক্ষ পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অভীক ঘোষ প্রার্থী হয়েছেন। আবার বামপন্থী চিকিৎসক হিসেবে সভাপতি পদে কাজলকৃষ্ণ বণিক, সহ-সভাপতি অমিতাভ ভট্টাচার্য, যুগ্ম সম্পাদক পবিত্র গোস্বামী এবং আরও কয়েক জন বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলেও দাবি সরকারপন্থী প্রার্থীদের।
কাজলকৃষ্ণের দাবি “মতাদর্শ থাকতেই পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কোনও দলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিপক্ষ গোষ্ঠী সরাসরি নিজেদের তৃণমূলপন্থী বলেই ঘোষণা করেছেন।” পবিত্র বলেন, “ওঁরা জোর করে আমাদের গায়ে রাজনীতির তকমা লাগিয়ে দিচ্ছেন। তৃণমূল সংগঠনের মধ্যে রাজনীতির প্রবেশ ঘটিয়েছে।” শান্তনুর দাবি, “ভুলে গেলে চলবে না, বাম জমানায় এই সংগঠনের নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন, তা আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে ঠিক করে দেওয়া হত।”