ধেয়ে আসছে ‘ডেনা’। বৃহস্পতিবার দিঘায় উত্তাল সমুদ্র। ছবি: পিটিআই।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে ক্রমেই স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে ‘ডেনা’। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ওড়িশায় ‘ল্যান্ডফল’ হলেও তার প্রভাব পড়বে এ রাজ্যেও। বাংলার কোন জেলাগুলিতে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়তে পারে? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সোমনাথ দত্ত জানিয়েছেন, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে ‘ডেনা’। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, এই দুই জেলারই একটা বড় অংশ সমুদ্র উপকূল জুড়ে। সেখানে ভারী বৃষ্টির সঙ্গে চলবে ঝড়। ‘ডেনা’ যখন আছড়ে পড়বে স্থলভাগে, তখন এ রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটারের আশপাশে।
আবহবিদেরা মনে করছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের তুলনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। কারণ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বেশি কিছু দ্বীপ রয়েছে। এ সব দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব হতে পারে অনেক বেশি। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের মে মাসে আয়লা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সব থেকে বেশি পড়েছিল এই জেলাতেই।
‘ডেনা’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ভারী থেকে অতি ভারী (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করা হয়েছে। সেখানে লাল সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এই তিন জেলার কিছু অংশে আবার অতি প্রবল বৃষ্টি (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) হতে পারে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোরের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে ‘ডেনা’। ওড়িশার এই ধামারা থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের দূরত্ব প্রায় ২৩৭ কিলোমিটার। ধামারা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটারের কিছু কম। সেই কারণে শুক্রবারও রাজ্যের এই উপকূলবর্তী দুই জেলায় দুর্যোগের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশে অতি প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী শনিবারও দুই মেদিনীপুরে ভারী (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ‘ডেনা’র গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার। সর্বাধিক গতি পৌঁছতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও দমকা হাওয়ার গতিবেগ সেই সময় এর আশপাশেই থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে মাঝেমধ্যে ১২০ কিলোমিটার। ‘ল্যান্ডফল’-এর প্রক্রিয়া যখন চলবে, সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদ্বীপ, সুন্দরবনে ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাকি অংশে সে সময় ঝড়ের গতি হতে পারে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি হতে পারে ৯০ কিলোমিটার। কলকাতায় সেই সময় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় হতে পারে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়া বইতে পারে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে। ঝড়ের প্রভাবে হতে পারে জলোচ্ছ্বাসও। পূর্ব মেদিনীপুরে ১-২ মিটার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার কিছু অংশে ০.৫-১ মিটার জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বাভাস পেয়ে আগেভাগেই সতর্ক প্রশাসন। ওই সব এলাকায় সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরানো হয়েছে।