Education

Education: পদে পদে প্রশ্ন, শিক্ষাই কঠিন পরীক্ষার মুখে

শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রায় কুড়ি মাস বন্ধ থাকার পরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

সারা রাজ্যের নিরিখে কতটুকু বেড়েছে ডিজিটাল শিক্ষার পরিকাঠামো? ফাইল চিত্র।

ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে দীর্ঘস্থায়ী অতিমারি। কিন্তু শিক্ষায় তার আঘাত সর্বাধিক বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ। সেই ক্ষত ও ক্ষতি সামলে শিক্ষার ঘুরে দাঁড়ানোটাও তাই অনেক বেশি সমস্যাসঙ্কুল। মডেল স্কুল, স্মার্ট ক্লাসরুম, সকলের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত শিক্ষার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে হাজারো প্রশ্নের কাঁটা। প্রশ্ন উঠছে, করোনাকালের দাবি মেনে গত কয়েক মাসে সার্বিক ভাবে শিক্ষার পরিকাঠামো কোথায় কতটা বেড়েছে? তাতে সামগ্রিক পঠনপাঠনের বিপুল ক্ষতির সুরাহা হবে কি?

Advertisement

শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রায় কুড়ি মাস বন্ধ থাকার পরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তো খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনলাইন শিক্ষা ছাড়াও জোর দেওয়া হয়েছে টেলিফোনে শিক্ষা, টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার উপরে। কিন্তু শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, রাজ্যে আরও বেশি মডেল স্কুল, স্মার্ট ক্লাসরুম, সকলের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। তৃতীয় বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেও কয়েক মাস কেটে গেল। যথেষ্ট মডেল স্কুল কোথায়? সব দিক থেকে স্মার্ট শ্রেণিকক্ষের দেখা মিলেছে কি? সারা রাজ্যের নিরিখে কতটুকু বেড়েছে ডিজিটাল শিক্ষার পরিকাঠামো?

প্রতিটি ব্লকে অন্তত একটি করে মডেল স্কুল তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত দশ বছরে বেশ কয়েকটি মডেল স্কুল তৈরি হলেও তৃণমূল তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে সব জেলায় মডেল স্কুল তৈরির কাজ তেমন ভাবে শুরু হয়নি। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার-সহ কিছু জেলায় মডেল স্কুল রয়েছে। তবে হাওড়া, দক্ষিণ দিনাজপুর, পূর্ব বর্ধমানের মতো কয়েকটি জেলায় একটিও মডেল স্কুল নেই বলে শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর। নতুন সরকারের আশ্বাস, ওই সব জেলায় মডেল স্কুলের কাজ দ্রুত শুরু হবে। প্রশ্ন উঠছে, কবে? আদর্শ স্কুলের প্রশ্নে সব জেলার মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য যে-তৎপরতা জরুরি, সেটা কোথায়? মডেল স্কুলের সঙ্গে ছাত্রাবাস গড়ার কথা থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষা দফতর সূত্রের দাবি, আবাসিক স্কুলের তেমন চাহিদা নেই। ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি থেকে যাতায়াত করে পড়াশোনা করতেই বেশি আগ্রহী।

Advertisement

প্রতিশ্রুতি ছিল, ২৭৮টি সরকারি শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (আইটিআই) প্রতিটিতেই স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ গড়ে তোলা হবে। মালদহে চারটি, উত্তর দিনাজপুরে চারটি, আলিপুরদুয়ারে একটি, দার্জিলিঙে তিনটি এবং অন্য কয়েকটি জেলার আইটিআইয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম আছে। কিন্তু সব জেলার আইটিআইয়ে তা গড়ে তোলা যায়নি। অতিমারির মধ্যে বাড়ি থেকে অনলাইনে ক্লাস করছেন পড়ুয়ারা। ফলে প্রশ্নের মুখে স্মার্ট ক্লাসরুমের প্রতিশ্রুতিও।

সকলের জন্য আরও বেশি ডিজিটাল শিক্ষার যে-আশ্বাস শোনা গিয়েছিল, গত কয়েক মাসে ট্যাব কেনার ১০ হাজার টাকা পরীক্ষার্থীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তা কিয়দংশে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শুধু ডিভাইস দিলেই কি ডিজিটাল শিক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়? প্রতীচী ইন্ডিয়া ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ বলেন, “ডিভাইস চালানোর জন্য রিচার্জের যে-খরচ, সেটা কি গ্রামের প্রান্তিক এলাকার ছাত্রছাত্রীরা বহন করতে সক্ষম? তা ছাড়া অনেক গ্রামাঞ্চলেই ইন্টারনেট সংযোগ তেমন শক্তিশালী নয়। ডিজিটাল শিক্ষার জন্য সেটাও তো জরুরি।”

পড়ুয়াদের জন্য ঋণ-কার্ড প্রকল্প সাড়া ফেলেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে সেখানেও। ৩১ অগস্ট পর্যন্ত ৮০,২৪১ জন শিক্ষা-ঋণের জন্য আবেদন করেছে। ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের আবেদনের সংখ্যা সামান্য বেশি। সব মিলিয়ে ঋণ মঞ্জুর হয়েছে মাত্র ৩২৮ জন পড়ুয়ার। সংখ্যাটা যে খুবই কম, প্রশাসনও তা অস্বীকার করতে পারছে না। রাজ্যের নিজস্ব সমবায় ব্যাঙ্কগুলি কেন পড়ুয়াদের ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না, সেই রহস্য রয়েই গিয়েছে। ছাত্র-ঋণ মঞ্জুর করার জন্য সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে বার বার নির্দেশ দিতে বাধ্য হচ্ছে নবান্ন।

বিভিন্ন জেলার কোনও স্কুলে শিক্ষকের অভাব প্রকট। আবার বেশ কিছু স্কুলে পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষক বেশি। এই বৈষম্য দূর করতে শিক্ষা দফতর এক দিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তেমনই উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে স্কুলে শিক্ষক বদলিও শুরু করেছে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে প্রায় পাঁচ হাজার এবং ভোটের পরে ১০,৫০০ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হলেও উচ্চ প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া থমকেই আছে।

শিক্ষক বদলির পোর্টাল উৎসশ্রীর মাধ্যমে যে-কোনও ধরনের বদলির ব্যাপারে পাঁচ হাজারেরও বেশি সুপারিশপত্র পাঠানো হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বদলির পোর্টাল ঘিরে কিছু জটিলতা এখনও রয়েছে। যে-সব স্কুলে কোনও বিষয়ে ‘সিঙ্গল টিচার’ বা মাত্র এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা আছেন, সেখানে উৎসশ্রীর মাধ্যমে বদলির আবেদন করলে তা ফিরে আসছিল। সম্প্রতি একক শিক্ষকেরও বদলির আবেদন নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যে-স্কুল থেকে একটি বিষয়ের একক শিক্ষক বদলি হচ্ছেন, তার পাশের কোনও স্কুল থেকে সেই বিষয়ের শিক্ষককে আনা হচ্ছে অস্থায়ী ভাবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “উৎসশ্রী একটি চলমান প্রক্রিয়া। যাঁদের অভিযোগ বা সমস্যা আছে, তাঁরা ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপ করে তা জানাতে পারেন। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement