দিলীপ ঘোষ ফাইল চিত্র
বিধায়করা দলের ঊর্ধ্বে নন। তাই দলকে না জানিয়ে তাঁরা নিজেদের মতো এখানে-ওখানে চলে যেতে পারেন না। বিজেপির হেস্টিংস কার্যালয়ে শনিবার দলীয় বিধায়কদের কর্মশালায় এই বার্তা দিলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে তিনি বলেন, সংগঠনকে নিয়ে চলতে হবে। বিধায়ক হয়ে কেউ যেন ভেবে না নেন, তিনি অনেক কিছু হয়ে গিয়েছেন। দল বিধায়ক তৈরি করেছে। ফলে একা একা নিজের মনে হলেই কোনও জায়গায় চলে যাওয়া ঠিক নয়। দলকে জানিয়ে যেতে হবে। আপাত ভাবে দিলীপবাবুর সতর্কবাণীর লক্ষ্য বিজেপির ৭৪ জন বিধায়ক। কিন্তু দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, শুধুই কি তা-ই? নাকি দিলীপবাবুর ওই কথার বিশেষ উদ্দিষ্ট বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী?
দিলীপবাবুর বক্তৃতার সময় অবশ্য কর্মশালায় শুভেন্দু ছিলেন না। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে শুভেন্দু সেখানে ঢোকেন। তবে সাম্প্রতিক কালে শুভেন্দু একাধিক বার দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা-সহ অনেক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন। রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু তখন বার বার বলেছেন, এ সব সফরের বিষয়ে কিছুই তাঁর জানা নেই।
প্রসঙ্গত, দিলীপবাবু শুক্রবার নারদ-কাণ্ড নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘যে মন্ত্রী, নেতাদের টিভির পর্দায় বান্ডিল বান্ডিল টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কেন প্ৰশ্ন উঠছে না?’’ তাঁর ওই মন্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন। নারদ-ভিডিয়োয় যে হেতু শুভেন্দুরও টাকা নেওয়ার ছবি দেখা গিয়েছিল, ফলে দিলীপবাবু পরোক্ষে সে দিকেও ইঙ্গিত করেছেন কি না, সেই চর্চা করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। তবে রাজ্য সভাপতির এ দিনের বক্তব্য সম্পর্কে অবশ্য দলের ব্যাখ্যা, তিনি বলতে চেয়েছেন, বিধানসভা চলাকালীন বিধায়করা যেন দলকে না জানিয়ে অন্যত্র না যান। বিজেপি সূত্রের আরও খবর, বৈঠকে এ দিন দিলীপবাবু বলেছেন, বিধায়কদের জনসংযোগ এমন ভাবে বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ তাঁদের সব সময় পাশে পান। বিধায়কদের মাধ্যমেই যেন মানুষের সঙ্গে বিজেপি-র পরিচয় বাড়ে।
বৈঠকে এ দিন শেষ বক্তা ছিলেন দলের সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ। বিধানসভা ভোটে পরাজয় সত্ত্বেও বিধায়কদের হতাশ না হওয়ার বার্তা দেন তিনি। সাংসদ খগেন মুর্মু, দলের রাজ্য সহ সভানেত্রী মাফুজা খাতুন এবং বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিধানসভা অধিবেশনের রীতিনীতির পাঠ দেন বৈঠকে। বলা হয়, শাসক দলকে তথ্যনিষ্ঠ ভাবে মোকাবিলা করতে বিধানসভার গ্রন্থাগারে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে বিধায়কদের। বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এ দিন বৈঠকে ছিলেন না বলে দলীয় সূত্রের খবর।
দলীয় সূত্রের আরও খবর, শুভেন্দু বৈঠকে বলেন, প্রতিষেধক-কাণ্ড নিয়ে এমন আন্দোলন করতে হবে, যাতে শাসক দলের ‘কান ঝালাপালা’ হয়ে যায়। প্রতিষেধক-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিজেপির নেতা-কর্মীরা এ দিন কলকাতার কয়েকটি জায়গায় পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধী দল হিসাবে বিজেপির ‘দায়িত্ববোধ’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছে টিকা চেয়ে বিধানসভায় সরব হওয়া উচিত বিরোধীদের। রাজ্যের প্রতি আর্থিক বঞ্চনা নিয়ে দিল্লিতে দরবার করা উচিত। কিন্তু বিরোধীরা যে শুধু হট্টগোল করতে বিধানসভায় এসেছেন, প্রথম দিনেই তা স্পষ্ট।’’