—ফাইল চিত্র
এই পরিস্থিতিতে বাসের ভাড়া না-বাড়ালে পরিবহণ স্বাভাবিক করতে ‘অপারগ’ বাসমালিকেরা। তাই সরকার নির্দেশ দিলেও রাস্তায় বেসরকারি বাস কার্যত অমিল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ‘কঠোর পদক্ষেপের’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সমস্যার কথা আমরা জানি। সরকার বিষয়টা দেখছে। বাস মালিকদের আমরা বার বার করে বলছি বাস চালাতে। না-হলে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
ভাড়ার জট কাটাতে আগামিকাল, সোমবার পরিবহণ দফতরের ময়দান তাঁবুতে বাসমালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন মন্ত্রী। বাসমালিক সংগঠনগুলি সঙ্ঘাতের বদলে নিজেদের অপারগতার কথাই সরকারকে জানিয়েছে। এ দিন অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আনলক পর্বে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা গত বছর পরিষেবা সচল করার কথা বলেছিলাম। এ বার পরিস্থিতি আরও কঠিন। বাস মালিকদের বাস নামাতে বলার জায়গায় আমরা নেই।’’ সিটি-সুবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘মানুষকে সব কিছুই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। বাসমালিকেরাও ব্যতিক্রম নন। পরিবহণ মন্ত্রী সংবেদনশীল মানুষ। আমরা আশা করি তিনি সমস্যার কথা বুঝবেন।’’
জেলাগুলিতেও বাসমালিকেরা ওই বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। কোনও কোনও জেলায় ভাড়ার পরিবর্তে যাত্রীদের কাছে ‘অনুদান’ চাওয়ার কথাও ভেবেছেন বাসমালিকেরা। ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কাজল দে বলেন, ‘‘শনিবার এক বৈঠকে ঠিক হয়, চার কিলোমিটার পর্যন্ত ন্যূনতম ১৫ টাকা ভাড়া করতেই হবে। তার পরে, প্রতি কিলোমিটার এক টাকা হারে বাড়াতে হবে। তবে এই ভাড়া থেকে পরিচারিকা ও দিনমজুরদের ছাড় দেওয়ার ভাবনা রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার ভাড়া না-বাড়ালে পোস্টার দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ন্যূনতম ভাড়া ১৫ টাকা অনুদান হিসেবে চাইব।’’
তবে এই ধরনের বিকল্প পরিস্থিতিতেও যে সমস্যা মিটবে তার আশা বাসকর্মী বা যাত্রীদের অনেকেই করছেন না। গত দু’দিনে রাস্তার ছবিটাই সেই কথা বলছে। এ দিন সপ্তাহান্তে কলকাতায় বাসের চাহিদা তুলনায় কম ছিল। সরকারি বাস চলেছে। কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাতেগোনা বেসরকারি বাস চললেও ১২-১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছ বলে খবর। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিভিন্ন জায়গায় সরকারি বাস চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এ দিনও বহু রুটে বেসরকারি বাস নামেনি। যার ফলে কাজে বেরিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বেসরকারি বাস মালিকদের দাবি, সরকারি ভাবে ভাড়া বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করা হলেই তাঁরা বাস নামাতে রাজি। উত্তর ২৪ পরগনায় বেশিরভাগ রুটে বাস চলেছে। তবে যাত্রী ছিল কম। বাস মালিকেরা জানান, ভাড়া এবং যাত্রী সংখ্যা না-বাড়ালে বাস চালানো সম্ভব হবে না।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের শিলিগুড়ি ডিপো থেকে শনিবার বিভিন্ন রুটে অন্তত ৮০টি বাস চলছে। তবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, বালুরঘাটে বেসরকারি বাস কার্যত চলেনি। উত্তর দিনাজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিকের দাবি, ডিজ়েল ও টোল ট্যাক্সের খরচ বৃদ্ধিতে লোকসান এড়াতে যাত্রীদের কাছ থেকে কিছুটা বেশি ভাড়া নিয়ে বাস চালিয়েছেন। বেসরকারি বাস চলেনি বাঁকুড়া, গ্রামীণ হাওড়ায়।
সপ্তাহের শেষ দিনে বহু মানুষ বাড়ি ফেরেন। কিন্তু বাস না-পেয়ে তাঁরা বিস্তর অসুবিধায় পড়েন। বাঁকুড়ায় চড়া ভাড়া হেঁকেছে ছোট গাড়িগুলি। গ্রামীণ হাওড়ায় বাগনান-ধর্মতলা এবং বাগনান-শ্যামবাজার, এই দু’টি রুটের বেসরকারি বাস চলছে। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। পশ্চিম বর্ধমানে পথে নামেনি মিনিবাস। এ দিন হুগলিতে বাস কম চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের রাস্তায় সারাদিনে প্রায় ৮৫০টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। এ দিন একটিরও দেখা মেলেনি। তবে সরকারি বাস চলেছে। একই ছবি ঝাড়গ্রামেও। পূর্ব বর্ধমানে গত দু’দিনের চেয়ে সামান্য বেশি বাস চলেছে। স্থানীয় এবং দূরপাল্লার বেশ কিছু রুটে বেসরকারি বাস চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। চলেছে সরকারি বাসও। তবে আজ, রবিবার যাত্রী না হওয়ার আশঙ্কায় অনেক মালিক বাস রাস্তায় নামাবেন না বলে জানাচ্ছেন। নদিয়ার কোনও অঞ্চলে ৩৫ শতাংশ তো কোথাও ৪০ শতাংশ বাস পথে নেমেছে। যাত্রীও কিছুটা বেড়েছে। স্বল্পপাল্লার লোকাল বাসের তুলনায় অবশ্য দূরপাল্লার বাসে যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তবে বাসমালিকেরা জানাচ্ছেন, শুধু ভাড়া বাড়ানো নয়, জ্বালানির দাম দ্রুত না কমালে এক সময় বেসরকারি বাস একেবারেই থেমে যাবে।