দিলীপ রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে শাহের বড় ভরসা ছিলেন ঘোষ। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকের পর থেকেই ‘চুপ’ দিলীপ ঘোষ। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপকে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে ফোন করে দিল্লি যেতে বলা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরেই দিল্লি রওনা হন দিলীপ। সন্ধ্যায় দিল্লির গুজরাত ভবনে সাক্ষাৎ হয় অমিতের সঙ্গে। মূলত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে থাকা বিজেপি সদস্যদের নৈশভোজে ডাকা হয়েছিল গুজরাত ভবনে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নৈশভোজ চলার সময়েই দিলীপের সঙ্গে কথা বলেন অমিত।
কী বিষয়ে এবং কত ক্ষণ অমিতের সঙ্গে কথা হয়েছে তা নিয়ে একেবারেই মুখ খুলতে রাজি নন দিলীপ। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘সব আলোচনাই কি বলা যায়! কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আমার যে কথা, তা যদি প্রকাশ্যেই বলার হত, তবে তো সাংবাদিক বৈঠক করেই জানানো হত।’’ তবে অমিতের সঙ্গে বৈঠকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া, দলে নতুন কোনও পদ পাওয়ার মতো বিষয় নিয়ে যে জল্পনা তা উড়িয়ে দিয়েছেন সদ্যই বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ খোওয়ানো দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমায় নিয়ে যে সব জল্পনা চলে তা আমি সবার পরে জানতে পারি। মজা লাগে। সামনে লোকসভা নির্বাচন। এখন কোনও জল্পনা নয়, ভোটের প্রস্তুতিতেই সকলের মন দেওয়া উচিত।’’
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্তমান সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মেয়াদ আগামী মাসেই শেষ হয়ে যাবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন কমিটিও তৈরি হবে। তার আগে বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলতে অমিত এমন জরুরি তলব করেছিলেন, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে জল্পনার অবশ্য শেষ নেই। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বিজেপিতে দিলীপের সাংগঠনিক পদ না-থাকলেও তিনি প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হিসাবে বাংলার কোর কমিটিতে রয়েছেন। এখনও রয়েছেন জাতীয় কর্মসমিতিতে। আবার বাংলায় নির্বাচনী প্রস্তুতি এবং সংগঠন বিস্তারের ক্ষেত্রেও দিলীপের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ রয়েছে বিজেপির। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও তেমনটা চান। যদিও পদ খোওয়ানোর পরে দিলীপ কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা। যদিও দিলীপ তা মানতে নারাজ। দিলীপ বলেন, ‘‘আমি কাজের মধ্যেই রয়েছি। রাজ্য নেতৃত্ব আমাকে যে দায়িত্বই দিন, আমি সেটা আগের মতো গুরুত্ব দিয়েই দেখি এবং দেখব। আমার কাছে ব্যক্তি নয়, সংগঠনই মূল।’’
রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, দিল্লিতে দিলীপকে বাংলার সংগঠনে ‘অভিমান’ ভুলে কাজ করারই পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ, দিন কয়েক আগেই দিলীপের একটি মন্তব্যে ‘অভিমান’-এর আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘আমি এখন শুধুই মেদিনীপুরের সাংসদ। পার্টি আমাকে আপাতত শুধু সাংসদ পদে দায়িত্ব পালন করতে বলেছে। আমি সেখানেই সময় দিচ্ছি। রাজ্য পার্টি কেমন চলছে দেখা আমার কাজ নয়।’’ যদিও শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরে এই প্রসঙ্গ তুলতে রাজি হননি দিলীপ। তবে জানা গিয়েছে, শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরবর্তী সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও সদস্য পদ দিতে পারে দিলীপকে। সেটা সম্ভবত বৃহস্পতিবারই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। যদিও দিলীপ নিজে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।