ফাইল চিত্র।
জঙ্গলমহলের উন্নয়নের জন্য ‘জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান’ সংক্ষেপে ‘জ্যাপ’ চালু করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু গত তিন বছর ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তার অর্থ আসেনি।
জঙ্গলমহলে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দুর্নীতি নিয়ে যেমন ক্ষোভ রয়েছে, তেমনই এই এলাকায় অনুন্নয়নের অভিযোগ সামনে এসেছে বার বার। ২০১০-’১১ সাল থেকে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার উন্নয়নে ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি) চালু করেছিল কেন্দ্র। গোড়ার দিকে বছরে এই প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা করে পেয়েছে জেলা। চালুর বছর কয়েক পরে অবশ্য এই প্রকল্পের টাকা আসা বন্ধ হয়। তারপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে চালু হয়েছিল ‘জঙ্গলমহল অ্যাকশন প্ল্যান’।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর (সদর), শালবনি, গড়বেতা-২ (গোয়ালতোড়)— এই তিনটি ব্লক মাওবাদী প্রভাবিত বলে পরিচিত ছিল। এই তিনটি ব্লকই এই প্রকল্পের অর্থ পেত। জেলা ভাঙার আগে অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের (ঝাড়গ্রামের ৮টি সহ) ১১টি ব্লক এই প্রকল্পের অর্থ পেত। পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে যখন ঝাড়গ্রাম জেলা তৈরি হল, তখন জ্যাপ থেকে ৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলার জন্য। জানা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জ্যাপের শেষ বরাদ্দ এসেছে ২০১৮-’১৯ সালে। রাস্তা, পানীয় জল প্রকল্প, সেচ প্রকল্পের মতো উন্নয়নমূলক কাজে এই প্রকল্পের অর্থ খরচ হয়েছে। ২০১৫- ’১৬ থেকে ২০১৮-’১৯- এই চারটি অর্থবর্ষে জ্যাপে ১,৪১৭টি প্রকল্প ধরা হয়েছিল। রূপায়িত হয়েছে ১,৩৯৭টি প্রকল্প। বরাদ্দ হয়েছিল ৯৮ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। খরচ হয়েছে ৯৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। জানা যাচ্ছে, ২০১৯-’২০ সালে ১৪ কোটি টাকা আসার কথা ছিল জ্যাপে। তবে নতুন করে আর টাকা আসেনি।
বিজেপির রাজ্য সহ- সভাপতি শমিত দাশের কটাক্ষ, ‘‘চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে রাজ্য। মেলা, খেলা, উৎসবে দেদার বেহিসেবি খরচ হচ্ছে। তাই জঙ্গলমহল এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা দিতে পারছে না রাজ্য সরকার!’’ পাল্টা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি তথা পিংলার তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতির দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলের উন্নয়নকে ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রাপ্য বরাদ্দ দেয়নি কেন্দ্র। আইএপি বন্ধ করেছে। তাও আমাদের সরকার উন্নয়নে জোয়ার এনেছে।’’ তবে জ্যাপের টাকা কেন আসছে না, তার সদুত্তর অবশ্য দিতে পারেনি তৃণমূল।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘জ্যাপে আমাদের জেলায় ভাল কাজ হয়েছিল। যে টাকা এসেছিল, খরচও হয়ে গিয়েছে। নতুন করে আর টাকা আসেনি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘আরও অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। জঙ্গলমহলের উন্নয়ন থেমে নেই।’’