টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন। —ফাইল চিত্র।
দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় রবিবার থেকে চলছে টানা বৃষ্টি। তার জেরে বিপর্যস্ত স্বাভাবিক জনজীবন। বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। আবহাওয়ার বদল হতেই মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়েছে পর্যটকদেরও। বুধবার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আবার ওই দিনই শুরু হচ্ছে পূর্ণিমার কটাল। তার ফলে নদী এবং সমুদ্রে জলস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে। পুজো কাটতে না-কাটতেই নিম্নচাপের জেরে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দারা। লক্ষ্মীপুজোর আগে টানা বৃষ্টির জেরে বেসামাল বাজারও।
বৃষ্টির জেরে সোমবার সুন্দরবনের একাধিক নদীতে জলস্তর বেড়েছে। তবে তা অনেকটা নীচে থাকায় নদী এবং সমুদ্র বাঁধে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে কয়েকটি নদী উত্তাল হয়ে ওঠায় ফেরি পরিষেবা ব্যাহত। ডায়মন্ড হারবার থেকে কুঁকড়াহাটি এবং কাকদ্বীপের ৮ নম্বর লট থেকে সাগরের কচুবেড়িয়া যাতায়াতের জন্য লঞ্চ কিছুটা দেরিতে চলছে। বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল সুন্দরবনের গদখালি থেকে গোসাবা যাওয়ার ভুটভুটি পরিষেবা। উপকূল এবং নদী তীরবর্তী এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের জলে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকেই নামখানা ব্লক প্রশাসন এবং ফ্রেজারগঞ্জ উপকূল থানার পক্ষ থেকে বকখালির সমুদ্র সৈকতে প্রচার চালানো হয়। সমুদ্রে স্নান করতে নামা পর্যটকদেরও উঠে আসতে বলা হয়।
মৌসুনি, ঘোড়ামারা এবং গোসাবার দ্বীপ অঞ্চলগুলির নদী তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের সরানো হয়েছে আশ্রয় শিবিরে। আগেই মৎস্যজীবীদেরকে ট্রলার নিয়ে তীরে ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। সোমবার সকালের মধ্যে ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি এবং ডায়মন্ড হারবারের ঘাটে ফিরেছে বহু ট্রলার। এ ছাড়া সমুদ্র থেকে ফেরার পথে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপ এবং চরে অনেক ট্রলার আশ্রয় নিয়েছে। বুধবার পর্যন্ত সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাতভর টানা বৃষ্টির জেরে সোমবার মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে নামখানার শিবরামপুরের দক্ষিণ রাজনগরে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ার। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম বিজলী সাঁতরা (৬৫)।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টিতে জনজীবন ব্যাহত হাওড়া এবং হুগলিতেও। হাওড়ায় সোমবার দুপুরের পর ভারী বৃষ্টিতে পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডের কিছু রাস্তায় জল জমেছে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে হুগলির বিভিন্ন এলাকাতেও। সোমবার বিকেলে কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় হুগলির গোঘাটের কাঁটালির দিগেরপাড়া গ্রাম। একাধিক ঘরবাড়ির চাল উড়ে যায়। ভেঙে যায় গাছপালাও। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা স্মরণকালে ঘটেনি বলেই মনে করছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
একই ছবি পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও। সামনেই লক্ষ্মীপুজো। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির জেরে গৃহবন্দি সাধারণ মানুষ। তাই জমেনি লক্ষ্মীপুজোর বাজারও। দিঘায় পর্যটকদের ভিড়। তবে বৃষ্টির জেরে অনেককেই কাটাতে হয়েছে হোটেলবন্দি হয়ে। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া দফায় দফায় বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বাঁকুড়ার জনজীবনও। বৃষ্টিতে গুমোট গরম থেকে মুক্তি মিললেও সাধারণ মানুষকে কাটাতে হয়েছে ঘরেই। রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। দোকানবাজারও অধিকাংশ ছিল বন্ধ। জেলায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল একেবারেই হাতে গোনা। লাগাতার বৃষ্টিতে আমন ধান চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল পুজোর আগের বৃষ্টিতে। রবিবার দিনভর একই ছবি দেখা গিয়েছে বীরভূম,মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়াতেও।