সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘জব-কার্ড’ খতিয়ে দেখে বাদ দিতে হবে অযোগ্য উপভোক্তাদের। ফাইল চিত্র।
তাগিদ মূলত দু’টি। আর্থিক ও রাজনৈতিক। কেন্দ্রীয় অর্থের সরবরাহ মসৃণ রাখার তাগিদটাই বঙ্গে ফের চালু হওয়া প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজ প্রশ্নহীন ভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রথম ও প্রধান বাধ্যবাধকতা। তার উপরে আছে বৃহত্তর নির্বাচনী খেলা। লোকসভা ভোট যদি ২০২৪ সালের ফাইনাল হয়, তা হলে আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন সেমিফাইনাল। সেই খেলায় জিততে হলে গ্রামীণ এলাকায় দীর্ঘ কাল বন্ধ থাকা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির কাজ নির্বিঘ্ন রাখতেই হবে রাজ্য সরকারকে। সে-ক্ষেত্রে রোজ কমবেশি পাঁচ লক্ষ উপভোক্তার উপযুক্ততা যাচাই করে ‘অযোগ্য’ দাবিদারদের বাদ দেওয়ার কাজটা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দীর্ঘ প্রায় আট মাস বন্ধ রাখার পরে কেন্দ্র সম্প্রতি ওই যোজনায় বঙ্গে ১১.৩৪ লক্ষ বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র দিলেও ‘আবাস প্লাস’ ব্যবস্থায় অন্তত ৫০ লক্ষ উপভোক্তার উপযুক্ততা যাচাই করতে হবে রাজ্যকে। ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু করে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হলে দিনে অন্তত পাঁচ লক্ষ উপভোক্তার দাবি যাচাই করা দরকার। ২৩টি জেলাকে দৈনিক ২২ হাজার উপভোক্তার উপযুক্ততা যাচাই করে অযোগ্যদের বাদ দিতে হবে। ফলে ছুটির দিন কার্যত শিকেয় উঠেছে।
এক জেলা-কর্তা বলেন, “৩১ মার্চ অর্থাৎ চার মাসের মধ্যে যাচাই-সব যাবতীয় বাকি কাজ শেষ করতেই হবে। নতুন আর্থিক বছরে পরবর্তী বরাদ্দের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যই এত তোড়জোড়।”
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের কোষাগারের বর্তমান অবস্থায় কেন্দ্রের অর্থ জরুরি। নানা অভিযোগে প্রকল্প দীর্ঘ প্রায় আট মাস বন্ধ থাকায় প্রশাসনিক পদক্ষেপকে ত্রুটিমু্ক্ত করাও বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া এই ধরনের গ্রামীণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগেও বিদ্ধ হয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। যার সতর্কবার্তা আগে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবাস প্রকল্প ফের ধাক্কা খেলে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তির পক্ষে তা সুখকর হবে না বলে মনে করছেন প্রশাসকদের একটা বড় অংশ।
আধিকারিকদের অনেকের প্রশ্ন, তা হলে কি এত দেরিতে আবাস যোজনায় অনুমোদন দিয়ে রাজ্যকে কার্যত বিপদেই ফেলল কেন্দ্র? তাঁদের বক্তব্য, দিন-রাত এক করে ২৪ ঘণ্টা কাজ করলেও দৈনিক ২২ হাজার উপভোক্তার দাবি যাচাই করা মুখের কথা নয়। এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাতে বিডিও থেকে জেলাশাসক, প্রত্যেকে দায়বদ্ধ হবেন। তাই ছুটির দিনেও কাজ করতে হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন নির্দেশিকা দিয়ে শনি-রবিবার, ছুটির দিনেও অফিস খোলা রাখতে বলেছে।
পঞ্চায়েত দফতরের নির্দেশ, সব গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘জব-কার্ড’ খতিয়ে দেখে বাদ দিতে হবে অযোগ্য উপভোক্তাদের। খসড়া তালিকা প্রস্তুত করবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। ব্লক স্তরে সংখ্যালঘু উপভোক্তা চিহ্নিত করতে হবে। গ্রামসভার অনুমোদন নিয়ে আপলোড করতে হবে বাড়ির খসড়া তালিকা। অযোগ্য উপভোক্তা চিহ্নিত করতে পারলেও গ্রামসভা নতুন কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে না। তাদের তালিকায় সিলমোহর দেবেন জেলা-কর্তৃপক্ষ। শেষে রেজিস্ট্রেশন, জিও ট্যাগ এবং অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন জেলা-কর্তৃপক্ষই।