পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনিতে মনোনয়নে দুষ্কৃতীদের বাধার অভিযোগ ওঠায় পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে জটলা সরাচ্ছে। ছবি: পাপন চৌধুরী।
গত পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা ছাড়াও ভোট লুটের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। এ বার সে ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের বিস্তারিত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার নিয়েও রাজ্য পুলিশকে ১৬ দফা নির্দেশাবলি পাঠিয়েছে কমিশন। প্রসঙ্গত, গত বারের হিংসার নজির উল্লেখ করেই ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছে। আগামিকাল, সোমবার এ ব্যাপারে আদালতে রিপোর্ট দেবে কমিশন। এই পরিস্থিতিতে কমিশনের এই নির্দেশিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
ভোট নিয়ে শুক্রবার জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কমিশন। তবে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের প্রশ্ন, শুধু ভোটের সময়ের কথাই মাথায় রেখে নির্দেশগুলি দেওয়া হয়েছে। অথচ মনোনয়ন পর্ব থেকেই যে ভাবে অশান্তি শুরু হয়েছে জেলায় জেলায়, তা মোকাবিলার আগাম ব্যবস্থা করা হয়নি কেন? প্রচার পর্বে সভা করা এবং মোটরবাইক, সাইকেল মিছিল নিয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও যে ভাবে সভা-সমিতির অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্থানীয় থানার ওসিদের হাতেই পুরো বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বহু ক্ষেত্রেই থানার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেন বিরোধীরা। প্রচার পর্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং হিংসা প্রতিরোধ নিয়ে কড়া বার্তা নির্দেশিকায় কেন নেই, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
ভোটের মনোনয়ন পর্ব শুরু হতেই জেলায়-জেলায় অশান্তির ঘটনা ঘটছে। প্রবীণ আধিকারিকদের একাংশের মতে, ভোট ঘোষণার আগে কমিশন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তুতি ঝালিয়ে নেয়। এ বার তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সেই পর্বে খামতি রয়েছে। যদিও কমিশন সূত্রের দাবি, দু’-তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তাই খামতির অভিযোগ ঠিক নয়। এ দিনও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মুর্শিদাবাদ-সহ কয়েকটি জেলার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মনোনয়ন পর্ব শান্তিপূর্ণ ভাবে চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন। খড়গ্রামে খুনের ঘটনা এবং ডোমকলে অস্ত্র-সহ ধৃত তৃণমূল নেতার ব্যাপারে রিপোর্ট চেয়েছে কমিশন।
ভোটারদের আস্থা ফেরাতে প্রশাসনকে কমিশনের নির্দেশ, প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। ভয় দেখানো রুখতে হবে। ভোটের দিন সব দলের নির্বাচনী এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে মনোনয়ন থেকেই যে হিংসা শুরু হয়েছে তাতে ভোটারেরা নির্ভয়ে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কমিশন জানিয়েছে, অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটারদের আস্থাবৃদ্ধি—সবের উপরেই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারে জেলা স্তরে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আইনশৃঙ্খলার দৈনিক রিপোর্ট কমিশন, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকে পাঠাবেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারেরা। তাতে অস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরক উদ্ধার, দাগি অপরাধীদের গ্রেফতার, কেউ হতাহত হলে মৃত, আহতের পরিচয়-সংখ্যা এবং সম্পত্তি নষ্টের পরিমাণ, পুলিশি পদক্ষেপের তথ্য নথিবদ্ধ করতে হবে। ১২ জুনের মধ্যে এলাকায় টহলদারির তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। ২৪ জুন বিকেল ৫টা থেকে সব অসমাপ্ত বাড়ি বা বহুতল, কমিউনিটি হল, হোটেল, লজ, গেস্টহাউস, স্টেডিয়ামগুলিতে তল্লাশি চালাতে হবে। রুখতে হবে বহিরাগত, দুষ্কৃতীদের জমায়েত বা অস্ত্র মজুতের সম্ভাবনা। সীমানা আটকে সব গাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে।
প্রচার নিয়ে পুলিশকে কমিশনের নির্দেশ, সভার অন্তত তিন দিন আগে দলীয় বা প্রার্থীর প্যাডে থানায় আবেদন করতে হবে। কোনও প্রার্থী একটি থানা এলাকায় দিনে তিনটির বেশি সভা করতে পারবেন না। দু’টি সভার মধ্যে অন্তত ৩০০ মিটারের ব্যবধান থাকবে। আগে গেলে আগে অনুমতি মিলবে। তবে আবেদন জমা দিলেও ওসির অনুমতি ব্যতীত সভা করা যাবে না। অনুমতির ক্ষেত্রে থানায় পৃথক রেজিস্টার থাকবে। মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এসডিও বা বিডিও-র অনুমতি লাগবে। মিছিল করে দোরে-দোরে প্রচার করা যাবে না। তবে প্রার্থীর সঙ্গে কত জন থাকলে ‘মিছিল’ বলা হবে, তা লেখা নেই নির্দেশিকায়।