হেস্টিংসে বিজেপি-র নির্বাচনী দফতরে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি-তে যোগ দিয়ে দলের সংবর্ধনা সভায় শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর হাতে বাংলা তুলে দেওয়াই তাঁর এবং তাঁদের সকলের প্রধান লক্ষ্য। কারণ, শুভেন্দুর কথায়, ‘‘যাতে বাংলা এবং কেন্দ্রে একই সরকার থাকে। তাতে একদিকে যেমন বাংলা কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সহায়তা পাবে, তেমনই রাজ্যের বেকার সমস্যার সমাধান হবে।’’
গত শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর আরেক শনিবার তিনি হেস্টিংসে বিজেপি-র নির্বাচনী দফতরে এলেন। তাঁর সঙ্গেই এলেন আরও যাঁরা সে দিন শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সকলকেই দলের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হল। শুভেন্দু ওই দফতরে এসে পৌঁছনোর আগে দফতরের অদূরে তৃণমূলের একটি সভা ঘিরে অশান্তি, বচসা এবং গোলমালের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীদের একপ্রস্ত ধস্তাধস্তিও হয়। তবে বাড়তি বাহিনী নিয়ে এসে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। তৃণমূলের সভামঞ্চ এবং তঞসংলগ্ন এলাকা গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেয় পুলিশ। শুভেন্দু পৌঁছনোর সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
তবে সংবর্ধনায় বলতে উঠে শুভেন্দু ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাবতে লজ্জা হচ্ছে যে, এতদিন আমি ওই দলটায় ছিলাম। সত্যিই লজ্জা হচ্ছে! ওই দলটায় না আছে কোনও শৃঙ্খলা। না আছে কোনও নিয়ম বা অনুশাসন।’’ সেই প্রেক্ষিতেই শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘বিজেপি-ই হল প্রকৃত রাজনৈতিক দল। যারা সত্যিই অব দ্য পিপ্ল, ফর দ্য পিপ্ল এবং বাই দ্য পিপ্ল। আমি অমিত শাহ’জিকেও এই একই কথা বলেছি।’’
আরও পড়ুন: শুভেন্দু আসার আগে হেস্টিংসে গোলমাল, বিক্ষোভ তৃণমূলের, মাঠে বিজেপি-ও
বিজেপি দফতরে শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে রয়েছেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়-সহ অনেকেই। নিজস্ব চিত্র।
বিজেপি দফতরে নিজের প্রথম বক্তৃতার আগে শুভেন্দু যে ‘হোমওয়ার্ক’ করে এসেছিলেন, তা তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট। সংক্ষিপ্ত ভাষণে তাঁর কথায় ঘুরেফিরে এসেছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কথা। ফিরে ফিরে এসেছে ‘আমি’ নয়, ‘আমরা’র কথা। যেমন তিনি বলেছেন, ‘‘আগামিদিনে আমাদের সকলের একটাই লক্ষ্য থাকবে। যাতে আমরা সকলে মিলে বিজেপি-র সোনার বাংলা স্লোগান পূরণ করতে পারি।’’ পাশাপাশিই, ‘নবাগত’ হিসেবে শুভেন্দু রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও প্রাপ্য পর্যাদা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য দলকে বিধানসভায় জয়যুক্ত করা। মাননীয় দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে দল অনেকটাই এগিয়েছে। রাজ্যে প্রধান বিরোধীদল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। বাকি কাজটা আমরা দায়িত্ব নিয়ে করব। আমরা সকলে মিলে দলকে সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে যাব।’’
তার পরেই শুভেন্দু নিয়ে এসেছেন মোদীর কথা। বাংলার কৃষকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না বলে শুক্রবার তাঁর ভাষণে ‘আক্ষেপ’ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে শুভেন্দুর জানিয়েছেন, আগামিদিনে যাতে মোদীর সেই ‘আক্ষেপ’ না থাকে, সেটা তাঁদের সকলকে নিশ্চিত করতে হবে। একমাত্র রাজ্য এবং কেন্দ্রে একই দলের সরকার থাকলেই যে সেটা সম্ভব, তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন শুভেন্দু।
পূর্বনির্ধারিত কিছু কর্মসূচির জন্য শনিবার দলের দফতরে পৌঁছতে শুভেন্দুর কিছু বিলম্ব হয়েছিল। বক্তৃতার প্রথমেই তিনি সে বিষয়ে উপস্থিত সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। পাশাপাশিই বলেন, ‘‘এই দলের শৃঙ্খলা আছে। দায়বদ্ধতা আছে। সেসব নিয়েই আমরা মানুষের কাছে যাব। দেরি হওয়ার জন্য আপনাদের সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি।’’
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শুভেন্দু শেষ করেছেন ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’ এবং সম্প্রতি তাঁর নিজের তৈরি স্লোগান ‘হরেকৃষ্ণ হরে হরে, পদ্মফুল ঘরে ঘরে’ দিয়ে। যা শুনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে হাততালি পড়েছে বিস্তর।