কাকদ্বীপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতা তারা চালিয়েই যাবে। কিন্তু কাল, বুধবার রাজ্যে কোনও রকম বন্ধ করতে দেওয়া হবে না বলে সোমবার স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন শাসক দল তৃণমূল এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কাকদ্বীপে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ দিন বুঝিয়ে দেন, কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনে তাঁর সমর্থন আছে। কিন্তু বন্ধে নেই। বাম ও কংগ্রেসের বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা বুধবারের ভারত বন্ধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ-প্রশাসনকে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ রাজ্যে সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে বলে জানায় নবান্ন।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), বেসরকারিকরণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিবাদে কাল, বুধবার গোটা দেশে ২৪ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে শ্রমিক, কৃষক সংগঠন, বাম-কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল। কিন্তু মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, নীতিগত ভাবেই তাঁরা বন্ধ সমর্থন করেন না। ক্ষমতায় আসার সময় থেকেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বন্ধে রাজ্যবাসীর আর্থিক ক্ষতি হয়। বাংলায় কোনও বন্ধ হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আমরা পথে আছি। কিন্তু এই বন্ধ করে লাভ কী? বিজেপির এই এনআরসি, সিএএ-র বিরুদ্ধে আমরা ধারাবাহিক ভাবে মিছিল-মিটিং করছি। নাগরিকের পক্ষে রাস্তায় আছি। কিন্তু বন্ধ হল সস্তার রাজনীতি। একটা বন্ধে রাজ্যের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি হয় গরিব মানুষের। আমি তা চাই না। দেশের অর্থনৈতিক হাল খারাপ। এই অবস্থায় কোনও ভাবেই বন্ধ সমর্থন করা হবে না।’’
আরও পড়ুন: ভাটপাড়ায় আজ ফের অনাস্থা বৈঠক
ধর্মঘটের দিন সব সরকারি কর্মীর হাজিরা নিশ্চিত করতে প্রতি বারের মতো এ দিন নির্দেশিকা দিয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতর। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, বন্ধের দিন প্রথমার্ধ বা দ্বিতীয়ার্ধ কিংবা গোটা দিনের জন্য ছুটি বরাদ্দ করা হবে না। বন্ধের আগের দিন যাঁরা ছুটিতে থাকবেন, বুধবার তাঁদের কাজে যোগ দিতেই হবে। বন্ধের দিনকে মাঝখানে রেখে আগে বা পরের দিন ছুটি নেওয়া যাবে না। নির্দেশিকা অমান্য করে যাঁরা বন্ধের দিন অফিস যাবেন না, তাঁদের কর্মজীবন থেকে এক দিন বাদ যাবে। সে-দিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে।
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অথবা আগে থেকে যাঁরা নির্দিষ্ট কারণে ছুটি নিয়ে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এই ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে না। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতিগত কারণ দেখিয়ে ছুটি নেওয়া যাবে না। যিনি বন্ধের দিন ছুটি নেবেন, তাঁকে লিখিত ভাবে কারণ দর্শাতে হবে। যাঁরা কারণ দর্শাবেন না, শৃঙ্খলাভঙ্গের দরুন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।
আরও পড়ুন: বিয়ের প্রস্তাবে না, মুখে বিষ ঢেলে খুন কিশোরীকে
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বিবৃতি দিয়ে জানান, রাজ্য সরকার এই ধরনের নির্দেশিকা আগেও দিয়েছে এবং তা উপেক্ষা করে কর্মচারীরা ধর্মঘট করেছেন। এ রাজ্যে কর্মচারীদের পাহাড়প্রমাণ আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে অফিসে অফিসে ধর্মঘট হবে। আইএনটিইউসি প্রভাবিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজ়ের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধর্মঘটের প্রতি নৈতিক সমর্থন রয়েছে। তবে কেউ অফিস যাবেন কি না, সেটা তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’’