শোকার্ত: রিঙ্কির মা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
পরীক্ষার ফল ভাল হয়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিভাবককে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেই মতো বৃহস্পতিবার কলকাতায় গিয়েছিলেন পিয়ারলেস হাসপাতালের বিএসসি নার্সিংয়ের ছাত্রী রিঙ্কি ঘোষের বাবা আনন্দ ঘোষ। তার পরই রাতে হস্টেলে রিঙ্কির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
সকলের সামনে বাবাকে ভর্ৎসনার অপমান সইতে না পেরেই রিঙ্কি আত্মঘাতী হয়েছেন— এমনই অভিযোগ করছেন মেয়েহারা মা। রিঙ্কির মা মিঠু ঘোষের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রিঙ্কি ফোন করেছিল। বারবার বলছিল, ‘আমাকে কখনও কষ্ট দেয়নি বাবা। তাও সকলের সামনে বাবাকে অপমানিত হতে হল।’ এটা সহ্য করতে না পেরেই আত্মঘাতী হয়েছে মেয়ে।” নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল থানার খড়ার লাগো সিংহপুরে বাড়ি বছর কুড়ির রিঙ্কির। তাঁর বাবা আনন্দবাবু অবশ্য টাটায় থাকেন। তিনি পেশায় ঠিকাদার। বরাবর মেধাবী ছাত্রী ছিলেন রিঙ্কি। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সত্তর শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। তার পর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে বিএসসি নার্সিংয়ে ভর্তি হন। রিঙ্কি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। সম্প্রতি একটি পরীক্ষায় রিঙ্কির ফল ভাল হয়নি। বৃহস্পতিবার তাঁর বাবাকে ডেকে সে কথা জানানোর পাশাপাশি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্ৎসনা করেন বলে অভিযোগ। রিঙ্কি সর্বক্ষণ মোবাইল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডুবে থাকেন বলেও বাবার কাছে নালিশ জানানো হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাবা-মেয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন বলে পরিবার সূত্রের খবর। সেই সময় মেয়ের অ্যানড্রয়েড মোবাইল নিয়ে আনন্দবাবু তাঁকে সাধারণ একটি মোবাইল ব্যবহারের জন্য দেন। তারপর টাটায় ফিরে যান আনন্দবাবু। সেখানেই মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পান তিনি।
শুক্রবার রিঙ্কির সিংহপুরের বাড়িতে ভিড় করেছিলেন পড়শিরা। রিঙ্কির ভাই এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কাঁদতে কাঁদতে মিঠুদেবী জানালেন, এপ্রিলে শেষ বাড়িতে এসেছিলেন রিঙ্কি। তাঁর কথায়, “সোমবার ভোট। আজ, শনিবার মেয়ের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। মেয়ে ফিরল কফিনে শুয়ে।”