সাত বছর আগে কিশোরী বেলায় ধর্ষণের কথা ভয়ে, লজ্জায় চেপে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শরীরে বাসা বাঁধা এইচআইভি সেই নির্যাতনের কথা আর গোপন রাখতে দেয়নি। হুগলির জাঙ্গিপাড়ার সেই কিশোরী এখন বাইশের তরুণী। ধর্ষণের মামলা চলছে শ্রীরামপুর আদালতে। বিচারক বৃহস্পতিবার নির্যাতিতার চিকিৎসার জন্য হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে (ডালসা) তিন লক্ষ টাকা সরকারি তহবিল থেকে দিতে নির্দেশ দিলেন।
২০১৪ সাল থেকে তরুণী নানা অসুখে ভুগতে শুরু করেন। ২০১৬ সালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরীক্ষায় তাঁর এইচআইভি ধরা পড়ে। তিনি তখন হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের একটি কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। তখনই চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, ২০১১ সালে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার সময়ে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের জানিয়েছিলেন, টেস্টের সময়ে পাশের গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের লোকটি বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে এসেছিল। লোকটি ঝাড়ফুঁকও করত। একদিন তিনি যখন বাড়িতে একা পড়াশোনা করছিলেন, তখন লোকটি পরীক্ষা ভাল হবে, এ কথা বলে ঝাড়ফুঁকের নামে তাঁকে ধর্ষণ করে। পরের দিনও একই ভাবে ফের ধর্ষণ করে এবং সে কথা কাউকে না-জানানোর জন্য হুমকি দেয়।
বিষয়টি সামনে আসার পরে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তরুণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পকসো আইনে মামলা রুজু হয়। অভিযুক্ত গ্রেফতারও হয়। সে এখনও জেলেই রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণ মেলে, অভিযুক্তেরও এইচআইভি রয়েছে।
শ্রীরামপুর আদালতের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক উৎপল মিশ্রের এজলাসে মামলার শুনানি চলছে। সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, বৃহস্পতিবার বিচারক তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
তরুণীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওঁর কী দোষ বলুন! ওঁর সারাটা জীবন নষ্ট হয়ে গেল। প্রথম দিকে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছিলাম। এখন সেই সমস্যা নেই। ও যদি ফের পড়াশোনা শুরু করতে চায়, বাড়িতে বসেই করতে পারে।’’ আর তরুণী বলেন, ‘‘সারাক্ষণ ওই কথাগুলো মনে পড়ে। লোকটার উপযুক্ত সাজা হোক। আরও পড়তে ইচ্ছে তো করে। কিন্তু…।’’ আর কথা সরে না। চোখ বেয়ে জল নামে।