প্রসবকালে মৃত্যু ফের বাড়ছে, দুশ্চিন্তাও

পরিসংখ্যান বলছে, গত ছ’বছরের মধ্যে ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরেই শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে সব চেয়ে বেশি প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। এই যুগে প্রসবকালে এক জন মহিলারও প্রাণহানির কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এই অবস্থায় প্রসূতি-মৃত্যুর এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য দফতর বেশ চিন্তিত।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২৯
Share:

একটু একটু করে সংখ্যাটা কমছিল। আর স্বস্তির রেখা ক্রমেই ফুটে উঠছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের কর্তাদের মুখে। কিন্তু সদ্য ফুরোনো অর্থবর্ষে প্রসূতি-মৃত্যুর হিসেব হাতে আসার পরে সেই স্বস্তি উধাও।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, গত ছ’বছরের মধ্যে ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরেই শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে সব চেয়ে বেশি প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। এই যুগে প্রসবকালে এক জন মহিলারও প্রাণহানির কারণ নেই বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এই অবস্থায় প্রসূতি-মৃত্যুর এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য দফতর বেশ চিন্তিত।

দেখা যাচ্ছে, ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যত মহিলার (১১৩২)-র মৃত্যু হয়, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে তার থেকে ২১৪ জন কম প্রসূতির প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে সেটা আবার প্রায় সাড়ে তিনশো বেড়ে গিয়েছে! সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে রাজ্যে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মোট ১২৭৭ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে সংখ্যাটা ছিল ৯১৮।

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত অর্থবর্ষে প্রসূতি-মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আসলে আমরা প্রসূতি ও শিশুর মৃত্যু ঠিকঠাক নথিভুক্ত করার উপরে বেশি জোর দিয়েছি। তাই হয়তো বেশি রিপোর্ট আসছে।’’ তিনি জানান, স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টিকে হেলাফেলা করছে না। যে-সব জায়গা থেকে বেশি প্রসূতি-মৃত্যুর খবর এসেছে, সেখানকার চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ভবনে ডেকে মৃত্যুর কারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রসূতিরই মৃত্যুর কারণ হল হাইপারটেনশন, খিঁচুনি এবং প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত।

স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট জানাচ্ছে, প্রসূতিদের একটা বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে। যেমন, গত এক বছরে কলকাতা মেডিক্যালে ৯০ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। এসএসকেএমে মৃত প্রসূতির সংখ্যা ৩৬, ন্যাশনালে ৪৩, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে ১২২, বর্ধমানে ৭০, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৫৫, মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৩১।

ওই সব হাসপাতালেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন, অ্যানেস্থেটিস্ট আছেন। চিকিৎসকের সংখ্যাও বেশি। তা হলে এত প্রসূতির মৃত্যু কেন, সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

গত এক বছরে মেডিক্যাল কলেজে ৭০০-র বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যালে ৯৯১, মেদিনীপুরে ৭৫০, মুর্শিদাবাদে ৮৫৯, বর্ধমানে ১৩৮৭, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ৮১২টি সদ্যোজাত শিশু মারা গিয়েছে। তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে রাজ্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement