বর্ধমানের আনাজ বিক্রেতা সদানন্দ। ছবি: উদিত সিংহ
সুনসান রাস্তা। তারই মধ্যে ভ্যানে আনাজের পসরা নিয়ে দাঁড়িয়ে দরাজ গলায় গান গাইছেন বিক্রেতা— ‘হরিবোল মন রসনা, দেশে আইল করোনা/ তাইনে সবার ভাবনা, কী করি উপায়/ কাজ না করলে পরে, সংসার চলা দায়...’। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ‘ভাইরাল’ হয়েছে বর্ধমানের আনাজ বিক্রেতার এই গান। গায়কের পরিচয় নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে সঙ্গীত-গবেষক উপালী চট্টোপাধ্যায় অনেকেই।
বর্ধমানের কাঞ্চননগরের ভূতবাগানে দু’কামরার ঘরে স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন অঙ্গদ সরকার। ভ্যানে আনাজ নিয়ে শহর ঘুরে বিক্রি করছেন প্রায় কুড়ি বছর। ক্রেতাদের কাছে পরিচিত সদানন্দ নামে। তাঁর কথায়, ‘‘হাসি-খুশি থাকি, গান গাই। তাই সবাই সদানন্দ বলেন। অঙ্গদ নামটা হারাতে বসেছে!’’ অভাবেও বরাবর পরিবারে গানের চর্চা ছিলই। ঠাকুরদা আশুতোষবাবু কবিগান, বাবা অম্বরীশবাবু ভাটিয়ালি-বোলান গান করতেন। তাঁর তিন ভাইও গানের চর্চা করেন।
৪৮ বছরের অঙ্গদবাবু জানান, দিনভর আনাজ বিক্রির পরে বাড়ি ফিরে গান বাঁধেন। কখনও ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প, কখনও বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অবহেলা, কখনও জল বাঁচানো বা বাল্যবিবাহ রোধের মতো বিষয় নিয়ে গান বেঁধেছেন।
‘লকডাউন’ শুরুর পরে বিক্রিবাটা কমেছে বলে দাবি অঙ্গদবাবুর। সম্প্রতি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তিনি গাইছিলেন— ‘সরকার করছে ঘোষণা, ঘরের বাইরে কেউ বার হবেন না/ পেটটা তো আর শোনে না..’। তা রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আপলোড’ করেন এক ক্রেতা সমরকুমার মোদক।
সঙ্গীত-গবেষক উপালী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁর গান বাঁধার মধ্যে একটা মুন্সিয়ানা রয়েছে। এমন স্বভাব-গায়কের উপযুক্ত স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।’’ পূর্ব বর্ধমানের তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সূত্রে খবর, বাউল-শিল্পী হিসেবে অঙ্গদবাবু ভাতা পান। দফতরের জেলা আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী বলেন, “উনি যাতে দু’মাসের ভাতা একেবারে পান, তা দেখা হচ্ছে।’’ স্বীকৃতি নিয়ে মাথাব্যথা নেই অঙ্গদবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘গান শুনে কেউ সচেতন হলেই আমি খুশি।’’