ছবি এএফপি।
সপ্তাহে দু’দিন করে সার্বিক লকডাউন করে লাভ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। সেই সঙ্গে রবিবারে সার্বিক লকডাউন করে লাভ হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিয়োলজিস্ট পর্ণালী ধর চৌধুরীর মতে, বাঙালির রবিবার বাজার যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাই রবিবার লকডাউন হলে সংক্রমণ কম ছড়াবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। তবে রবিবার বা লকডাউনের আগে-পরের দিনগুলিতে যাতে অতিরিক্ত ভিড় না তৈরি হয়, সে দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এটাও মাথায় রাখতে হবে উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তেরা ১৪ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে আক্রান্ত থাকতে পারেন এবং সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দু-এক দিন লকডাউন করে লাভ হবে না। পর্ণালী অবশ্য এ-ও বলছেন যে দু-এক দিন লকডাউন করে সংক্রমণ কমেছে তার কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই। কড়া নজরদারি না-থাকলে লকডাউন ওঠার পরে সংক্রমণ বেড়েও যেতে পারে।
ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল সংঘমিত্রা ঘোষ বলেন, ‘‘এর আগেও তো লকডাউন হয়েছে। সবকিছু খুলে দেওয়ার পরে কী হল? আসল কথা হল, কনট্যাক্ট ট্রেসিং। যা আমাদের রাজ্যে ঠিক মতো হচ্ছে না।’’
ইউনিসেফের প্রাক্তন পরামর্শদাতা তথা কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর কুণাল মজুমদার বলেন, ‘‘লকডাউন সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়। মানুষকে বুঝতে হবে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো কোভিড থাকবে। তাই নিজেদের স্বার্থে মাস্ক পরা, দূরত্ব মেনে চলার মধ্যে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু সতর্ক হওয়া মানে কোভিড রোগীর প্রতি অমানবিক আচরণ নয়।"
গাণিতিক মডেল তৈরি করে আইআইএসসি বেঙ্গালুরুর দুই বিজ্ঞানী শশীকুমার গণেশন এবং দীপক সুব্রমনি দেখিয়েছিলেন, সপ্তাহে দুটি দিন সার্বিক লকডাউন করলে সংক্রমণে রাশ টানা যেতে পারে। সেই মডেল এখনও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বড় রাজ্যগুলিতে সে ভাবে প্রয়োগ হয়নি। এ রাজ্যে সর্বশেষ দু’টি সার্বিক লকডাউনের দিনে কড়াকড়িতে পথেঘাটে অনেক কম লোক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার আগের ও পরের দিন পথেঘাটে, বাজারে যে পরিমাণে ভিড় ছিল, তাতে লকডাউনের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদ্বয় বলেছিলেন যে, দু’দিন সার্বিক লকডাউন হলে বাকি দিনগুলিতে কঠোর দূরত্ববিধি মানতে হবে। গত সপ্তাহে লকডাউন বাদে বাকি দিনগুলিতে তা দেখা যায়নি।