(বাঁ দিকে) গৌতম আদানি এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
শেখ হাসিনার আমলে গৌতম আদানির সংস্থার সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তি খতিয়ে দেখবে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। রবিবার ইউনূসের দফতর থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানানো হয়েছে। আদানি ছাড়াও আরও ছ’টি সংস্থার সঙ্গে হওয়া বাণিজ্যচুক্তিও আতশকাচের তলায় রয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এই ছ’টি সংস্থার মধ্যে একটি চিনের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা। আর বাকি পাঁচটি সংস্থা হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে একটি সূত্রের দাবি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিদ্যুৎ, শক্তি এবং খনিজ সম্পদ দফতর বিষয়ক মূল্যায়ন কমিটি ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য আইনি এবং তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগের প্রস্তাব করছে।” বিবৃতি অনুসারে, ওই বিদ্যুৎচুক্তিগুলির শর্ত খতিয়ে দেখে ‘বহু প্রমাণ’ মিলেছে যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সেগুলিকে পুনর্মূল্যায়ন কিংবা বাতিল করা যেত। এই চুক্তিগুলি করার নেপথ্যে অন্য কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল কি না, তা তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে বলেও জানানো হয়েছে।
কমিটির প্রধান হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে তাঁরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইনি এবং অনুসন্ধানমূলক সংস্থাগুলির সহায়তা চাইছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করার জন্যই ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় ১২৩৪ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছিল আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু অগস্টে হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা এবং দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার পরেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সম্প্রতি কেন্দ্র বিদ্যুৎ রফতানির বিধি বদলে জানায়, গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। এর ফলে আদানি গোষ্ঠী বড় লোকসান-সম্ভাবনা থেকে রেহাই পেয়েছিল বলে বাণিজ্যমহলের একাংশ দাবি করে থাকেন।
সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ ৮০ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে। জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, দেশে ডলার সঙ্কট সত্ত্বেও তারা আদানি গোষ্ঠীকে ১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। বাকি টাকাও মেটানো হবে বলে আশ্বস্ত করে ঢাকা।
অন্য দিকে, ‘ঘুষকাণ্ডে’ নাম জড়ানোয় সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন আদানি। এই শিল্পপতি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ছ’জনের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আমেরিকার আদালত সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে আদানিকে। অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের মোট ২২৩৭ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন আদানিরা। ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ আমেরিকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে তারা আমেরিকার আইন মেনে চলতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে তারা ঘুষের টাকা আমেরিকার বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ, যা পুরোপুরি বেআইনি। ফলে মামলার মুখে পড়েছে তারা।