গার্ডরেল দিয়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে রাস্তা। বুধবার লকডাউনের বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত
করোনা সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়ছে। তা সামলাতেই উত্তরবঙ্গের পাঁচ শহরে বুধবার সকাল থেকে সম্পূর্ণ বা সার্বিক লকডাউন করা হবে বলে ঘোষণা করেছিল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতেই সেই নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট সব জেলায় পৌঁছে যায়। তার পরও বুধবার সকালে ভিড়ভাট্টা দেখা গিয়েছে ওই শহগুলিতে। কেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসন জানিয়েছে, তারা রাতে ১১টা থেকে ১২টার সময় মাইকে প্রচার চালিয়েছিল। ফলে সেই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছয়নি। সংক্রমণ ও মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে যে শিলিগুড়ি শহরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, সেখানে এ দিন লকডাউন কার্যকর করা যায়নি। ঠিক হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই নির্দেশ কার্যকর করা হবে। একমাত্র জলপাইগুড়ি বাদে চারটি শহরেই প্রশাসনিক কর্তাদের কাজে পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব দেখা গিয়েছে বলে প্রশাসনের একটি অংশেরই বক্তব্য।
শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে জেলশাসক এস পুন্নমবলম মঙ্গলবার রাতেই একাধিক বার বিবৃতি দেন। সব শেষে তিনি জানান, বুধবার আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনেরই একটি অংশের বক্তব্য, সেই আলোচনা করে পূর্ণ লকডাউনের রূপরেখা তৈরি করতে লেগে গেল বুধবার গোটা দিন। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাত দিনের জন্য সার্বিক বা পূর্ণ লকডাউন শুরু হবে। প্রশ্ন উঠেছে, যে শিলিগুড়িতে প্রায় রোজই করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত হারে, সেখানে এই ভাবে এক দিন ‘নষ্ট’ করা কি উচিত হল?
মালদহেও দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। গত তিন দিনের সরকারি হিসেব বলছে, সোমবার ৭৫ জন, মঙ্গলবার ৯৪ জন এবং বুধবার ১২১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই জেলায়। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিন ধরে ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদহ শহরে দুপুর দুটো থেকে লকডাউন চলছে। যদিও তাতে সকালের ভিড়ে কোনও ছেদ পড়েনি বলেই স্থানীয় লোকজনের দাবি। এ দিন তো দুপুর দেড়টার সময়ও ইংরেজবাজার ফোয়ারা মোড়ে মোটরবাইক, টোটো সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশকে। মুদি, আনাজ, কাপড়, জুতোর দোকানও বিভিন্ন জায়গায় খোলা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেলের পরে রাজ্য থেকে লকডাউনের নির্দেশিকা আসে। তার পরে মাইকে প্রচার শুরু হয়। গভীর রাতেও কিছু জায়গায় প্রচার চলে। সম্ভবত সে কারণেই সকলের কাছে পূর্ণ লকডাউন নিয়ে বার্তা পৌঁছয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তবে শহরে এ দিন বহু টোটো, ই-রিকশা আটক করা হয়।
আরও পড়ুন: আরও পরীক্ষা, আরও পরিকাঠামোর পরামর্শ
প্রায় একই ছবি রায়গঞ্জের পথেঘাটেও। গত রাতে যে নির্দেশিকা পৌঁছেছে, তা নিয়ে এ দিন দুপুরে রায়গঞ্জের মহকুমাশাসক অর্ঘ্য ঘোষ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে পথে নেমে মাইকে প্রচার চালান। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, তারা মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ প্রচার করেছিল। তাতেই হয়তো অনেকের কাছে এই বার্তা পৌঁছয়নি।
কোচবিহারের অবস্থাও আলাদা নয়। সেখানেও রাতে প্রচার হয়েছে। কিন্তু তা সকলের কাছে পৌঁছয়নি। কোচবিহারের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল এ দিন পথে নেমে স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টি জানানোর দায়িত্ব নেন। তাতে কিছুটা কাজ হয়। সন্ধ্যার দিকে ভিড়ভাট্টা কমে।
এই পরিস্থিতিতে একমাত্র ব্যতিক্রম জলপাইগুড়ি। মঙ্গলবারই সেখানকার জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি জানান, তাঁরা বুধবার সকাল থেকে মাইকে প্রচার চালাবেন। বিকেল পাঁচটা থেকে লকডাউন শুরু হবে। সেই মতো এ দিন এগিয়েছে জলপাইগুড়ি সদর শহরের প্রশাসন। তার পরেও কিছু লোক রাস্তায় ছিল বলে অভিযোগ। যদিও প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যাবে।