ছবি: পিটিআই।
ভিন্ রাজ্যের আটকে থাকা মানুষের জন্য এ রাজ্য তার দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু বহু রাজ্যই তা করছে না বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান সোমবার মমতাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন, সে রাজ্যে আটকে থাকা বাংলার মানুষকে ফেরানোর জন্য ট্রেনের ব্যবস্থা করতে তিনি যেন রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতার এমন মন্তব্যকে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা মনে করেন, যাঁরা যে রাজ্যে আটকে আছেন, তাঁদের দেখভাল এবং নিজ রাজ্যে ফেরানোর দায়িত্ব সেই রাজ্যের পালন করার কথা। তিনি এ দিন নবান্নে বলেন, ‘‘দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত— এই জায়গাগুলোর অবস্থা বিপজ্জনক। ওই সব জায়গায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভাল করে থাকতে, খেতে, ঘুমোতে পারেননি। অনেকে মারা গিয়েছেন। সে সব ক্ষেত্রে রাজ্যগুলোকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। যে রাজ্যে যাঁরা আছেন, তাঁদের দেখভাল এবং ফেরানোর দায়িত্ব সেই রাজ্যের নেওয়ার কথা। আমি তো এখানে সে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু অন্য অনেক রাজ্য তা করছে না।’’
তার আগে শিবরাজ মমতাকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে পশ্চিমবঙ্গের অনেক শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের রাজ্যে ফিরতে চান। সরকারি ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা নিজেদের মতো করে যানবাহন জোগাড় করে রওনা হচ্ছেন। কিন্তু তা যেমন ব্যয়সাপেক্ষ, তেমনই সুরক্ষিতও নয়। তাই আপনাকে অনুরোধ, ওই শ্রমিকদের ফেরাতে ইনদওর-কলকাতা ট্রেন চালানোর জন্য রেল মন্ত্রকের কাছে আবেদন করুন।’
আরও পড়ুন: সোনার রাজধানীতে ধুঁকছেন হাজার হাজার পরিযায়ী, ক্ষোভ বাড়ছে ফিরতে চেয়ে
আরও পড়ুন: ‘অসৌজন্য’ হচ্ছে, ফের অমিত শাহকে তোপ মমতার
বস্তুত, ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা বিপুল সংখ্যক মানুষের হাতেই এখন টাকা-পয়সা নেই। থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্তও সুনিশ্চিত নয়। ঘরে ফেরার তাগিদে তাঁরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রশাসনের কাছে নাম লেখাচ্ছেন। ট্রেন বা অন্য কোনও পরিবহণের বিষয়ে তথ্য না পেয়ে মরিয়া হয়ে তাঁরা যোগাযোগ করছেন এ রাজ্যের বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতেই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, আটকে থাকা মানুষের জন্য একসঙ্গে ট্রেন বা বাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে তাঁদের গাড়ি ভাড়া করার খরচ এবং রাজ্যে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হোক। রাজ্যে কতগুলো ট্রেন কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি চলছে বলে অভিযোগ আটকে থাকা মানুষ ও বিরোধী নেতাদের। সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই লকডাউন করায় এই পরিস্থিতির দায় অবশ্যই মোদী সরকারের। কিন্তু বিপন্ন মানুষগুলোর জন্য কিছু ব্যবস্থা তো করতে হবে। তাই রাজ্যের কাছে মানুষের অসহায়তার কথা জানাচ্ছি।’’
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ভিন্ রাজ্য থেকে মানুষকে ফেরাতে বাংলার সরকার হাজার কোটি টাকার খরচাও কষ্ট করে সামলাচ্ছে। শ্রমিকদের কাছ থেকে ট্রেনের কোনও ভাড়া না নেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। ফিরে আসা মানুষের স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা ও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। আবার অন্য রাজ্যের মানুষকে এ রাজ্য নিখরচায় শিবিরে রাখছে ও ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। গোটা প্রক্রিয়া যে রাজ্য সরকারের পক্ষে যথেষ্ট কঠিন, তা সকলকেই মাথায় রাখতে হবে বলে শাসক শিবিরের শীর্ষ স্তরের মত।