Marriages

Marriage: ১০০ জনের মধ্যে ৪৫! দেশে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের হার সর্বাধিক বাংলায়

ওই বিলটি আলোচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত এই পরিসংখ্যান কোভিড পর্বের আগে। তবে কোভিডজনিত লকডাউন তথা আর্থিক সঙ্কটে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে মেয়েদের অকালে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে বলেই বিভিন্ন সমাজকর্মীর অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি, কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ০৬:২৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

গোটা দেশে অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের হার পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি। রাজ্যের ১০০ জনের মধ্যে ৪৫ জনের বেশি মেয়ের একুশে পড়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ২১ বছর। রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে কম।

Advertisement

রেজিস্ট্রার জেনারেল সম্প্রতি ২০১৯-এর ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম’-এর পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। জনগণনা বাদ দিলে দেশের জনসংখ্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে এটাই সব থেকে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান। এই পরিসংখ্যান বলছে, জাতীয় স্তরে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২২.১ বছর। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ২১ বছর। পঞ্জাবে মেয়েদের বিয়েদের গড় বয়স ২৪.২ বছর, দিল্লিতে ২৪.১ বছর। এই মাপকাঠিতে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহারের থেকেও পিছিয়ে পশ্চিমবঙ্গ।

সরকারি এই পরিসংখ্যান এখনও দেখেননি বলে জানাচ্ছেন রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের সংঘমিত্রা ঘোষ। তবে তাঁর মতে, ‘‘বিষয়টির মধ্যে নানা পরত আছে। বিয়ের বয়সের পরিসংখ্যানের অঙ্ক দিয়েই রাজ্যে মেয়েদের ক্ষমতায়নের জায়গাটা কোথায় দাঁড়িয়ে তা বোঝা যাবে না।’’ বাল্যবিবাহ রুখতে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প নজর কেড়েছে এ রাজ্যে। তা আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদর কুড়িয়েছে। নানা বয়সের মেয়েদের জন্য সামাজিক প্রকল্পের ছড়াছড়ি এ রাজ্যে। মেয়েদের জন্য নানা ধরনের অধিকার কার্যকর করা তাঁর সরকারের একটি প্রধান কাজ বলে বার বার দাবি করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মেয়েদের সমর্থনও তাঁর সরকারের বড় শক্তি বলেও তিনি মনে করেন। তবে মেয়েদের বিয়ের পরিসংখ্যানে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটা আপাত ভাবে উজ্জ্বল নয়।

Advertisement

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গের ৪৫.৯ শতাংশ মেয়েদের ২১ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর হলেও, ৩.৭ শতাংশ মেয়ের তারও আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের ৫০.৪ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ২১ বছরের পরে। সেই তুলনায় পঞ্জাবে ৭৬ শতাংশ বা জম্মু-কাশ্মীরে ৮৫ শতাংশের বেশি মেয়ে ২১ বছরের পরে বিয়ে করেন। রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কম বয়সে বিয়ের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে, কারণ এখানে বেশির ভাগ বিয়েই প্রশাসনের কাছে নথিভুক্ত হয়। অন্য অনেক রাজ্যে তা হয় না বলেই আসল পরিস্থিতিটা আপাত ভাবে বোঝা যায় না।’’ এ ছাড়া বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই মেয়েরা সার্বিক ভাবে পিছিয়ে আছে সেটাও সব সময়ে প্রমাণ হয় না বলে মনে করেন কোনও কোনও সমাজকর্মী। অনন্যাই বলছেন, ‘‘এখানে কম বয়সি ছেলেমেয়েরা অনেকেই পালিয়ে বিয়ে করে। সেই সিদ্ধান্ত ঠিক ভুল যা-ই হোক, এখানকার মেয়েরা অনেকটাই স্বাধীনচেতা। পশ্চিমবঙ্গে ‘অনার কিলিং’ বা পারিবারিক কুলমর্যাদা রক্ষায় মৃত্যুও হয় না। এই দিকগুলিও মাথায় রাখা উচিত।’’ রাজ্যের এক সরকারি কর্তাও বলছেন, ‘‘মেয়েদের সার্বিক অবস্থা বুঝতে শুধু বিয়ের বয়স নয়, শিক্ষা কিংবা পরিবারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকা কী সেটাও দেখতে হবে। পঞ্জাব, হরিয়ানার তুলনায় নারী, পুরুষের অনুপাত এখানে ভাল। অর্থাৎ কন্যাভ্রূণ হত্যা কম। তাই বিয়ের বয়সের হিসাব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মেয়েদের অবস্থার মূল্যায়ন করা ঠিক নয়।’’

গত ডিসেম্বরে নরেন্দ্র মোদী সরকার ছেলেদের মতো মেয়েদেরও বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার জন্য সংসদে বিল পেশ করেছিলেন। বিরোধী শিবির থেকে এ বিষয়ে তাড়াহুড়ো না-করার দাবি ওঠে। ওই বিলটি আলোচনার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত এই পরিসংখ্যান কোভিড পর্বের আগে। তবে কোভিডজনিত লকডাউন তথা আর্থিক সঙ্কটে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে মেয়েদের অকালে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে বলেই বিভিন্ন সমাজকর্মীর অভিজ্ঞতায় উঠে এসেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement