প্রতীকী ছবি।
ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করার কথা। কিন্তু, বহু ক্ষেত্রে সেই নম্বর নথিভুক্ত নেই। যেখানে আছে, তার আবার বেশির ভাগই ভুল। ফলে, চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না উপভোক্তাদের সঙ্গে। আশানুরূপ সাড়া মিলছে না ‘স্বচ্ছতা অভিযান’-এ! ধাক্কা খাচ্ছে রেশন কার্ডকে পুরোপুরি সুরক্ষা কবচে মুড়ে ফেলার কাজ।
প্রত্যেক বৈধ উপভোক্তার রেশন নিশ্চিত করতে রেশন পদ্ধতিতে বেশ কিছু বদল আনে রাজ্য সরকার। স্বচ্ছ পরিষেবা দিতে রেশনে এসএমএস এবং বায়োমেট্রিক পদ্ধতিও চালু করে খাদ্য দফতর। খাদ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এই ব্যবস্থা পুরোপুরি সফল হবে তখনই, যখন উপভোক্তা সঠিক মোবাইল এবং আধার নম্বর নিজের রেশন কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করবেন। কিন্তু গত জুলাই থেকে এ নিয়ে প্রচার চললেও অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। কারণ, উপভোক্তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে এসএমএস পরিষেবা দিতে গিয়ে দেখা যায়, সফল এসএমএস-ডেলিভারি সংখ্যার তুলনায় ‘ব্যর্থতা’-র সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ! এমনকি, দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে রেশন কার্ডের সঙ্গে মোবাইল এবং আধার সংযুক্ত করতে চেয়ে জমা পড়া আবেদনপত্রের সংখ্যা আধিকারিকদের এখনও সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘প্রায় ১০ কোটি মানুষের কাছে ডিজিটাল রেশন কার্ড রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় খুব কম সংখ্যক কার্ডে উপভোক্তার সঠিক মোবাইল যুক্ত রয়েছে। বাকিগুলিতে হয় মোবাইল নম্বর দেওয়া নেই, না হয় সেগুলি সঠিক নয়। এ জন্যই সরকার প্রত্যেক উপভোক্তাকে নিজের রেশন কার্ডের সঙ্গে সঠিক মোবাইল নম্বর যুক্ত করতে বার বার আবেদন জানাচ্ছে।’’
এ পর্যন্ত অগ্রগতির তথ্য দিতে না পারলেও খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, ১-৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রায় ৩৭ লক্ষ ৭৮ হাজার উপভোক্তার রেশন কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠানো হয়েছিল। সফল ‘ডেলিভারি’ হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার এসএমএস। ব্যর্থ এসএমএস-এর সংখ্যা ২৪ লক্ষ ১৮ হাজারের কিছু বেশি । ঘটনাচক্রে, রেশন কার্ডের সঙ্গে মোবাইল এবং আধার নম্বর যুক্ত করতে ‘ফর্ম-১১’ অনেকদিন আগেই প্রকাশ করেছে রাজ্য। কিন্তু দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে গত মাস পর্যন্ত মাত্র ৩৭ হাজারের মতো এমন আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘যে আবেদনপত্রগুলি এসেছে, তার মধ্যে অনেকগুলিই আবার অসম্পূর্ণ। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই আবেদনগুলি গ্রাহ্য করা সম্ভব নয়।’’
গত লকডাউন পর্বে রেশন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ওঠার পরেই পদ্ধতি সংশোধন করে খাদ্য দফতরকে আরও স্বচ্ছতা আনার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তার পর থেকেই বিকল্প পদ্ধতি তৈরি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তখনই এসএমএস এবং বায়োমেট্রিক পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। স্থির হয়, রেশন কার্ডের সঙ্গে উপভোক্তার মোবাইল এবং আধার নম্বর যুক্ত হয়ে গেলে বায়োমেট্রিক যাচাই প্রক্রিয়ায় আঙুলের ছাপ দিয়ে ‘ই-পজ়’ যন্ত্রের মাধ্যমে রেশন তোলার সুযোগ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্টকে। কোনও কারণে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সফল না হলেও নিজের মোবাইল নম্বরে আসা ‘ওটিপি’ দিয়ে রেশন তুলতে পারবেন উপভোক্তা। রেশন-সামগ্রী সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে সে ক্ষেত্রে উপভোক্তা মোবাইলে প্রাপ্তির বার্তাও পেয়ে যাবেন।