প্রতীকী ছবি।
কল বসিয়ে সমস্ত গ্রামীণ পরিবারে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পে রাজ্যের ‘ঢিমে গতি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল কেন্দ্র। জানাল, এ বিষয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। জল-জীবন মিশন প্রকল্পের বার্ষিক পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গ যে জমা দেয়নি, ৬ জুন তা-ও জানিয়েছিল দিল্লি।
যদিও রাজ্যের বক্তব্য, নতুন বছরের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে পাঠানো রয়েছে। এখন বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রকল্পের অগ্রগতির সমীক্ষা চলছে। প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, এখন রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এমন প্রকল্প চলছে। সমীক্ষার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেলে সব ক’টি প্রকল্পের অগ্রগতি বোঝা যাবে। তা ছাড়া, প্রতি জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। তা শেষ হলে, উপযুক্ত কর্মীদের প্রকল্পের কাজে যুক্ত করা হবে। সেই পরিকল্পনা কার্যকর হতে শুরু করেছে বলেও রাজ্যের বক্তব্য।
২০২৪ সালের মধ্যে দেশে সমস্ত গ্রামীণ পরিবারে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া লক্ষ্য কেন্দ্রের। সেই প্রকল্প কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্যগুলির। কেন্দ্রের বিবৃতি অনুযায়ী, চিঠিতে মন্ত্রী লিখেছেন, এই প্রকল্পে নতুন টাকা বরাদ্দ হয় কাজের অগ্রগতি এবং টাকা খরচের বহর দেখে। ২০১৯-২০ সালে যেখানে রাজ্যের প্রায় ৩২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারকে জলের সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, সেখানে কলের সংযোগ দেওয়া গিয়েছে ৪,৭৫০টি। ২০১৯-২০ সালে এই প্রকল্পে কেন্দ্রের তরফে ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও রাজ্য খরচ করতে পেরেছে ৪২৮ কোটি। এ ছাড়া, আর্সেনিক, ফ্লোরাইড কবলিত এলাকার জন্য ২০১৭ সালের মার্চ থেকে রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে ১,৩০৫ কোটি টাকা। তার মধ্যেও ৫৭৩ কোটি অব্যবহৃত।
কেন্দ্রের দাবি, ২০১৯-২০ সালে যেখানে ওই পানীয় জল প্রকল্পে রাজ্যের জন্য ৯৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, সেখানে ২০২০-২১ সালের বরাদ্দ ১,৬১০ কোটি। আগের বারের অব্যবহৃত অঙ্ক ধরে শুধু জল-জীবন মিশন প্রকল্পেই কেন্দ্রের কাছ থেকে ২,৭৬০ কোটি টাকা পাওয়া নিশ্চিত। সম পরিমাণ টাকা রাজ্য নিজের ভাঁড়ার থেকে দিলে, প্রায় ৫,৬৪৫ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে কাজে নামতে পারবে তারা।
কেন্দ্রের মতে, পঞ্চদশ আর্থিক কমিশনের রিপোর্ট মেনে রাজ্য যে ৪,৪১২ কোটি টাকা পাবে, তার অর্ধেক তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে খরচ করতে হবে পানীয় জল ও শৌচ ব্যবস্থায়। টাকা মিলবে স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পেও। তাই সঠিক পরিকল্পনা ছকে এগোলে, বাড়িতে জল পৌঁছনোর পাশাপাশি এই করোনা-সঙ্কটের সময়ে গ্রামে কাজের সুযোগও তৈরি হবে বহু জনের জন্য।
লকডাউনে কর্মহীন হয়ে রাজ্যে ফিরে যাওয়া শ্রমিকদের জীবিকা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এ জন্য ১০০ দিনের কাজ এবং জল-জীবন মিশন প্রকল্পকে কাজে লাগাতে বলা হচ্ছে রাজ্যগুলিকে। পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘জব কার্ড’ দিয়ে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকারও। কিন্তু পঞ্চায়েত দফতরের দাবি, অনেক শ্রমিক ওই কার্ডে তেমন আগ্রহী নন। এই পরিস্থিতিতে জল-জীবন মিশন প্রকল্পে তাঁদের কাজে লাগানো যেতে পারে বলে একটি প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।