ছবি পিটিআই।
বছর দশেক আগে অন্ধ্রপ্রদেশকে টেক্কা মেরে মাছ উৎপাদনে এক নম্বরে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ পাঁচটা রাজ্যের তুলনায় মাছ উৎপাদনের হারে সবথেকে পিছিয়ে।
মৎস্য দফতরের সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, ২০১৩-১৪ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন ছিল ২০.২ লক্ষ টন। ২০১৭-১৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৫ লক্ষ টন। আবার ২০১৩-১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে মাছের উৎপাদন ছিল ১৫.৮ লক্ষ টন। ২০১৭-১৮ সালে সেই উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৭.৪ লক্ষ টনে। গত পাঁচ বছরে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৭০ শতাংশ। যেখানে রাজ্যে বৃদ্ধির হার মাত্র ১০ শতাংশ। পড়শি রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ গত পাঁচ বছরে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গকে টেক্কা মেরেছে।
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে টাস্ক ফোর্স কমিটি তৈরি হয়েছিল। ব্লক ভিত্তিক মাছ চাষের উৎপাদন বাড়়াতে ওই কমিটি ১০৪ পাতার রিপোর্ট দেয়। তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের নেতৃত্বে কমিটিতে ছিলেন মৎস্য, সেচ, কৃষি, কৃষিবিপণন এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের তৎকালীন মন্ত্রীরা।
অভিযোগ, টাস্ক ফোর্স গঠিত হলেও তার সুপারিশের বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত হয়নি। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে মাছ উৎপাদন বা়ড়াতে প্রতিটি ব্লকে পরিকাঠামো বাড়াতে বলা হয়েছে। অথচ বর্তমানে বহু পদ ফাঁকা রয়েছে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে মৎস্যবন্ধু নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে সব না থাকায় ফল যা হওয়ায় তাই হচ্ছে।’’
মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে মাছ চাষের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করেন ফিশারিজ এক্সটেনশন অফিসার (এফইও) বা মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ২৫০টি পদ ফাঁকা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রফেশনাল ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নারায়ণ বাগ বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত টাস্ক ফোর্স মৎস্য দফতরের খোলনলচে বদলে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ দফতরের সমতুল পরিকাঠামো গড়ে তোলার সুপারিশ করলেও তা বাস্তব রূপ পেল না। আশা করি, সরকার প্রান্তিক চাষিদের যাবতীয় পরিষেবা পৌঁছে দিতে অতি দ্রুত টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ কার্যকর করবে।’’
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গড় উৎপাদনের নিরিখে রাজ্যে মাছ চাষের হার তুলনায় কম হলেও মাছ চাষে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, শীঘ্রই আমাদের রাজ্যের উৎপাদন অন্য রাজ্যকে টেক্কা দেবে।’’ টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ এখনও কেন রূপায়িত হল না? মৎস্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘টাস্ক ফোর্স কমিটির রিপোর্ট নবান্নে জমা দিয়েছি। সবটা আমাদের হাতে নেই।’’