বালুরঘাটে জনতার মাঝে মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ছবি— পিটিআই।
উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। দুর্গম এলাকায় যেমন বহু মানুষের বসতি, তেমনই বনে-জঙ্গলে হাতি, গন্ডার, বাইসন, চিতাবাঘের আনাগোনাও লেগে থাকে। গত বছর এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল বুনো হাতির আক্রমণে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে উত্তরের অরণ্য এলাকা তথা দুর্গম এলাকা থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে এ বার বাসের ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে যেতে পারে, এবং তার পর নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে। বুধবার সকালে বালুরঘাটে এ কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলা সফরে বেরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার, শিলিগুড়ি ঘুরে মুখ্যমন্ত্রী আসেন দিনাজপুরে। মঙ্গলবার বালুরঘাটে কর্মসূচি ছিল। বালুরঘাট সার্কিট হাউসেই রাতে ছিলেন মমতা। বুধবার সকালে তিনি সার্কিট হাউস থেকে হেঁটে বেরোন। গন্তব্য, ৩০০ মিটার দূরের হেলিপ্যাড। পথেই মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। সেখানে তিনি জানান, উত্তরের অরণ্য এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারে, সে জন্য বাসের বন্দোবস্ত করছে রাজ্য সরকার। বাসে করে তারা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবে। তার পর পরীক্ষা দিয়ে আবার সেই বাসেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বাড়িতে। এ ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং জেলায় খুব শীত পড়ে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় ক্লাসে বসে থাকা পড়ুয়াদের পক্ষে কঠিন। তাই রাজ্য সরকার পাহাড়ের সমস্ত স্কুলে রুম হিটার দেবে। মমতা বলেন, ‘‘গত বার একটা ঘটনা ঘটেছিল। তাই বন দফতরের কর্মীরা তাদের বাসে করে তুলে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা হলে পৌঁছে দেবে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াঙে যে হেতু ঠান্ডা, তাই আমরা সব স্কুলে রুম হিটার দিচ্ছি।’’
প্রসঙ্গত, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর ডিভিশনের বেলাকোবা রেঞ্জের মহারাজ ঘাটে বাবার সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল অর্জুন দাস। সেই সময় জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল সংলগ্ন টাকিমারি এলাকায় হামলা চালায় দলছুট একটি দাঁতাল। হামলায় গুরুতর জখম হয় অর্জুন। তাকে নিয়ে তড়িঘড়ি জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু হাসপাতাল যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় অর্জুনের। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই উত্তরবঙ্গের দুর্গম এলাকা থেকে পরীক্ষার্থীদের নিরাপদে হলে পৌঁছতে উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার।