ফাইল চিত্র।
পিএম কিসান প্রকল্পটি কার্যত মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি জানান, কেন্দ্র আবেদনকারী কৃষকদের তথ্য দিলে, রাজ্য তা যাচাই করে দেবে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে মুখ্যমন্ত্রী সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন বলেও খবর। মমতা এ দিন বলেন, ‘‘যাদের দু’একর জমি আছে, অতিরিক্ত কিছু টাকা পেলে পাক।’’
এর আগে সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য। তোমরকে একাধিক বার চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টাকা রাজ্য সরকারের হাতে দেওয়া হোক, রাজ্যই তা উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেবে। কিন্তু কেন্দ্র সেই
প্রস্তাব মানেনি।
এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে অভিযোগ মমতার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে ফোন করে বলেছি, তোমরা কেন রাজ্য সরকারকে বিশ্বাস করছ না? ট্রেজারির মাধ্যমে যে টাকা যায়, তা অডিট হয় ক্যাগের মাধ্যমে। তার পরেও আমাকে বলা হল, তারাই প্রকল্প করবে। ওদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বুঝে গেলাম। আমার কাছে কোনটা বড়? ওরা নরেন্দ্র মোদীর নামে দু’-এক লক্ষ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চিঠি পাঠাবে, আর বলা হবে কৃষকেরা নাকি ২০ লক্ষ টাকা পাবে! তাই বললাম, যা-ই করো, তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত জানাও।’’
মমতার অভিযোগ, রাজ্যকে এড়িয়ে একটি পোর্টালে ইচ্ছুক কৃষকদের নাম নিয়েছিল কেন্দ্র। ফলে তাঁরা উপভোক্তাদের সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। অথচ রাজ্য কেন সেই তালিকা যাচাই করছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কেন্দ্র! মমতা বলেন, ‘‘রাজ্যের পোর্টালে যে ইচ্ছুক কৃষকদের নাম রয়েছে, সেগুলো নিচ্ছে না। পাছে আমাদের কাছে তথ্য থাকে, তাই কেন্দ্রীয় একটি পোর্টাল করে ২০-২২ লক্ষ লোকের নাম নিয়েছে। আমাকে বলছে, যাচাই-তথ্য পাঠাচ্ছ না, তাই দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা এটা বুঝিনি যে, ওরা এটা নিয়ে রাজনীতি করছে। আমরা বলেছি, তথ্য দাও। তবে তো যাচাই করব। আমার পোর্টালে নাম লেখালে দেবে না। কারণ, বাংলা অচ্ছুৎ। কিন্তু কৃষকরা আমার কাছে গর্বের বিষয়। তাই লিখেছি, তথ্য পাঠাও, আমরা যাচাই করে জানিয়ে দেব। বিশ্বাস না করলে তাদের ব্যাপার।’’
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটের আগে থেকেই কেন্দ্রের পিএম কিসান এবং রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্প নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের উত্তাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফের শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রাজ্যের প্রকল্প অনেক বেশি কার্যকর। তাঁর বক্তব্য, কৃষকের দু’একর জমি থাকলে কেন্দ্রের প্রকল্পে বছরে ছ’ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। আর, কৃষকবন্ধুতে প্রতি বছর পাঁচ হাজার করে টাকা পান কৃষকেরা। এমনকি, এক কাঠা জমি থাকলেও দেড়-দু’হাজার টাকা পাওয়া যায় প্রতি বছর। আবার কৃষকের মৃত্যু হলে পরিবার ২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ পায়।
মমতা বলেন, ‘‘পিএম কিসানের অনেক আগেই কৃষকবন্ধু চালু হয়েছিল। আমরা ৭০ লক্ষ কৃষককে দিচ্ছি। ওদেরটা হলে ২০-২১ লক্ষ কৃষক পাবেন। অনেকে বলছে আমপান নিয়ে ক্যাগ হচ্ছে। আদালত খারাপ নির্দেশ দেয়নি। বলেছে, এই অডিট ক্যাগ করে। তাই তারাই তা করবে। বিধানসভায় সেই রিপোর্ট জমা পড়ে। এ সব যারা জানে না, তারাই বোকা বোকা কথা বলে। বোকা থাকতে দিন তাদের।’’