উদ্যোগী: কমলালেবু চাষিদের পাশে থাকতে লেবু কিনে বিক্রি করবে রাজ্য সরকার। নিজস্ব চিত্র
এক উদ্যোগে দু’কুল রক্ষা। এক দিকে কমলালেবুর পাহাড়ি উৎপাদকদের পাশে দাঁড়ানো, অন্য দিকে সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্য দামে সেই লেবু পৌঁছে দেওয়া। ভোটের মুখে রাজ্য সরকার এ ভাবেই পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দাদের মন কাড়তে চাইছে।
দার্জিলিং পাহাড়ে কমলালেবুর পাহাড় জমেছে। বিক্রি হচ্ছে না। ভোটের মুখে দার্জিলিঙের কমলালেবু-সঙ্কট সামাল দিতে আসরে নেমেছে সরকার। সেখানকার চাষিদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাঁদের উৎপাদিত সব কমলালেবু কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। দার্জিলিঙের লেবুর অপেক্ষায় থাকা আমজনতার কাছে তা ‘ন্যায্য মূল্যে’ পৌঁছে দিতে ‘সুফল বাংলা’-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে দার্জিলিঙের কমলালেবু পাওয়া যাবে আট থেকে ১০ টাকায়।
শীতে বিপুল পরিমাণ কমলালেবু উৎপাদিত হয় দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায়। লাভজনক এই চাষে যুক্ত থাকেন বহু পাহাড়বাসী। লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে চাষ করে অন্যান্য বছর ভাল লাভ পান তাঁরা। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। করোনা সংক্রমণ, লকডাউন এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে গোটা ব্যবসা ভীষণ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, লোকাভাবে এক দিকে উৎপাদিত কমলালেবু বাজারজাত করা যাচ্ছে না, তেমনই পাঠানো যাচ্ছে না বিদেশেও। ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সেখানকার চাষিরা।
অনেক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য, দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা ভোট। এখন পাহাড়ের কৃষকদের দুর্দিনে মুখ ফিরিয়ে থাকলে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। তাতে আখেরে ক্ষতি হবে শাসক দলের। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, কমলালেবুর চাষে প্রথম বছরে এক-এক জন চাষিকে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। পরের চার বছরে অবশ্য সেই খরচ কমে হয় ৬১ হাজার টাকা। এ বার চাষিদের পক্ষে সেই খরচ তোলা মুশকিল হয়েছে।
এক প্রশাসনিক কর্তা জানান, অবিক্রীত কমলালেবু পাহাড় থেকে এনে সুফল বাংলার বিভিন্ন স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ স্টলে বিক্রি করা হবে। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গাছ থেকে পাড়ার পরে দার্জিলিঙের কমলালেবু খুব বেশি দিন তাজা থাকে না। তাই দ্রুত সেগুলি কলকাতায় আনতে রেলের সঙ্গে পৃথক বন্দোবস্ত করেছে প্রশাসন। কমলালেবু এসে গেলেই আজ, মঙ্গলবার অথবা কাল, বুধবার থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করবে সরকার।
কমলালেবু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এক দল সরকারি বিশেষজ্ঞ দার্জিলিঙে গিয়ে সরেজমিন পরিস্থিতি দেখে আসেন। চাষিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দাম স্থির করেছেন সরকারি প্রতিনিধিরাই। কৃষকেরা সেই দামে কমলালেবু বিক্রি করতে রাজি হওয়ায় তার ভিত্তিতে চুক্তিপত্র সই করা হয়েছে। ‘‘সরকার যে-দামে কমলালেবু কিনবে, তাতে চাষিদের ক্ষতি হবে না। যে-দামে তা বিক্রি করা হবে, তাতেও সরকারের লাভ নেই। এতে কৃষক এবং ক্রেতা— উভয়েই উপকৃত হবেন। বিভিন্ন হাত ঘুরে আসার পরে যে-কমলালেবু কিনতে মানুষকে প্রতিটির জন্য ২৫ থেকে ৩৫ টাকা খরচ করতে হত, তা আট থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাবে,’’ বললেন প্রশাসনের এক কর্তা। এগুলো সবই বড় কমলালেবু।
ছোট কমলালেবুও চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে রাজ্য। তা থেকে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, সিরাপ প্রস্তুত করা হবে। এক প্রশাসনিক কর্তার আশ্বাস, রাসায়নিক প্রয়োগ করে লেবুগুলি সংরক্ষণ করা হবে না। তা থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যেও প্রিজ়ারভেটিভ ব্যবহার করবে না সরকার। ওই প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘কমলালেবুর স্বাভাবিক স্বাদ-গন্ধ বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। আপাতত পাঁচ লক্ষ লেবু আনা হচ্ছে। বাজারের চাহিদা এবং দার্জিলিঙের পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’’