গ্রন্থাগারে আর পুনর্নিয়োগের পথে হাঁটছে না রাজ্য সরকার। প্রতীকী ছবি।
পুনর্নিয়োগেও পারিশ্রমিক দিতে হয় অর্থাৎ টাকা গুনতে হয় সরকারের কোষাগার থেকে। সেই খরচ এড়াতে গ্রন্থাগারে আর পুনর্নিয়োগের পথে হাঁটছে না রাজ্য সরকার। নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। জেলায় জেলায় গ্রন্থাগার চালাতে ‘নিখরচা’র স্বেচ্ছাসেবক চায় নবান্ন, যাঁদের টাকা দিতে হবে না।
রাজ্যের ২৩টি জেলার গ্রামীণ গ্রন্থাগারে ৭৩৮টি গ্রন্থাগারিক-পদে নিয়োগের জন্য অর্থ দফতরের সবুজ সঙ্কেত মিলেছিল প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু তার পর থেকে ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে এক পা-ও এগোয়নি সরকার। নতুন নিয়োগের প্রশ্নে নিরুত্তর থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল, গত দু’বছরে, সরকার পোষিত গ্রন্থাগার থেকে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁরা ফের পুরনো পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। অর্থাৎ পুনর্নিয়োগ। কিন্তু তাতেও তো টাকা কিছু লাগবেই। চলতি বছরে সেই নির্দেশেও দাঁড়ি টেনে নবান্নের ঘোষণা, ‘বিভিন্ন জেলার গ্রন্থাগার সচল রাখতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করুন।’ শর্ত একটাই, কাজ করতে হবে বিনা পারিশ্রমিকে!
বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, খেলা-মেলা-উৎসবে অনুদান ও খয়রাতির প্রশ্নে রাজ্যের কোষাগারে টান পড়ে না, কার্পণ্য শুধু নিয়োগের ক্ষেত্রেই! গ্রন্থাগার বিভাগে নিয়োগের প্রশ্নে সরকারের বারংবার পিছিয়ে যাওয়ার পিছনে দুর্নীতির ছায়া দেখছে বাম এবং কংগ্রেসের সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলিও। নবান্ন সূত্রের দাবি, গ্রন্থাগারে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের পরামর্শ নিতান্তই সাময়িক। স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছে। জনসাধারণের গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মনোজ চক্রবর্তী শূন্য পদে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগের দাবি জানিয়ে বলছেন, ‘‘বই, সংবাদপত্র, পত্রপত্রিকা পড়ে সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে উঠুন— সরকার তা চায় না। তাতে অনেক অন্ধকার দিকই সামনে চলে আসতে পারে। বরং খেলা-মেলা-উৎসবে মানুষকে ভুলিয়ে রাখা অনেক সহজ!’’
প্রায় দু’বছর আগে, অর্থ দফতরের অনুমোদন পেয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরকার পোষিত বিভিন্ন গ্রন্থাগারের ৭৩৮টি শূন্য পদে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নবান্ন। কিন্তু গ্রন্থাগার বিভাগ সেই সংক্রান্ত সার্চ বা সন্ধান কমিটি এখনও গঠন করতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন কলেজ থেকে ফি-বছর কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী লাইব্রেরিয়ানশিপ পাশ করলেও সরকারি চাকরির দুয়ার তাঁদের কাছে বন্ধই রয়ে গিয়েছে। অথচ শূন্য পদের সংখ্যা চার হাজারেরও বেশি। গ্রন্থাগার দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রায় ২৪৮০টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ১২০০টিরও বেশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে কর্মীর অভাবে। আর যে-সব গ্রন্থাগার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এখনও চলছে, সেগুলির অধিকাংশই এখন ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’।
গ্রন্থাগার আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত সুকোমল ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘গ্রামীণ এলাকায় নামমাত্র যে-ক’টি গ্রন্থাগার চালু রয়েছে, সেগুলি কার্যত সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রচারের কাজ করে। সেখানে বই নেই, নিত্যকার খবরের কাগজও আর পৌঁছয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, ডিজিটাইজ়েশনের নামে সাধারণ মানুষের বই পড়ার অভ্যাসেই দাঁড়ি টেনে দিতে চাইছে সরকার।