কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। —ফাইল চিত্র।
এই দফায় নিজেরা বরাদ্দ দিলেও আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের আশা ছাড়ছে না রাজ্য সরকার। সূত্রের দাবি, সেই আশায় কেন্দ্রের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই যোগাযোগ রেখে চলেছে নবান্ন। এখন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে বৈঠকের সময় পেতে সেই দৌত্য আরও বাড়িয়েছে রাজ্য। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ভোটের আগে আবাসে নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা দেওয়ার ঘোষণা কার্যকর করতে গিয়ে বিপুল আর্থিক চাপ নিতে হচ্ছে নবান্নকে। সেই দিক থেকে এই তৎপরতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
সূত্রের খবর, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে এক আইএএস অফিসারকে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর বৈঠকের সময় পাওয়া এবং বকেয়া সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা সেই সফরের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ছিল। কারণ, প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করছেন শিবরাজ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাতে আবাস, একশো দিনের কাজ বা গ্রামীণ সড়ক যোজনার মতো খাতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ প্রতিফলিত না হলে রাজ্যের আর্থিক বোঝা আরও বেশি বাড়বে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। এই অবস্থায় শিবরাজের বৈঠকের গুরুত্ব অসীম। সূত্র জানাচ্ছে, বেশ কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বৈঠক সেরে ফেললেও, এ রাজ্য এখনও সময় পায়নি। সেই কারণে রাজ্যেরদূত হিসেবে পঞ্চায়েত দফতরের সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দিল্লিতে পাঠিয়েছিল নবান্ন।
প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর বৈঠকের সময় পাওয়া জরুরি। আবার আগামী বাজেটের আগে আদৌ সময় মিলবে কি না, তা বোঝা যাচ্ছে না। এইসব কারণে মন্ত্রকে অফিসারপাঠানো হয়েছিল।”
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ৬০% টাকা দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০%-এর দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্র এই খাতে তাদের বরাদ্দ না দেওয়ায়, রাজ্যই উপভোক্তাদের সেই টাকা দেবে বলে গত লোকসভা ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার থেকে সেই বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য নিজেই জানিয়েছে, তাতে প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা খরচ হবে। প্রসঙ্গত, মূল আবাসের উপভোক্তা ১১ লক্ষ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত আরও ১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়াশুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যখ্যা, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ একদিন আসতে পারে— এই আশায় আবাস প্রকল্পে কেন্দ্রের বিধিগুলির অনেকটাই মানছে রাজ্য। যেমন, ২০২২ সালের নভেম্বরে যে ১১ লক্ষ উপভোক্তার তালিকা অনুমোদন করেছিল কেন্দ্র, সেই তালিকা ধরেই বরাদ্দ দিচ্ছে রাজ্য। অতিরিক্ত ১ লক্ষ উপভোক্তা টাকা পাচ্ছেন পৃথক ভাবে। তাঁরা আবাসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নন। আবার, টাকা দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র যে সুরক্ষা বিধিগুলির সুপারিশ করেছিল, তা মেনেই উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবাসের এক একজন উপভোক্তা সব মিলিয়ে পাবেন এক লক্ষ ২০ হাজার করে টাকা। আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কেন্দ্রের অনুমোদিত ১১ লক্ষ আবাস-উপভোক্তাকে ধরলে প্রথম কিস্তিতে ৬,৬০০ কোটি টাকা (মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকার হিসেবে) খরচ হবে রাজ্যের। পরের কিস্তিতে ওই একই মাথাপিছু অঙ্কে আরও প্রায় ৬,৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। সব মিলিয়ে অন্তত ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার খরচের মধ্যে কেন্দ্রের ৬০% বরাদ্দ শেষপর্যন্ত পেলে প্রায় ৭৯২০ কোটি টাকা বেঁচে যাবে সরকারের। তাই পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, কেন্দ্রের বরাদ্দ পরে পাওয়া গেলেও, তাতে সুবিধা হবে রাজ্যের। তখন যাতে কোনও প্রশ্ন উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এত ব্যবস্থা।
এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রীয় দল এবং পর্যবেক্ষক দলগুলির সব সুপারিশ রাজ্য মেনে নিয়েছে এবং কার্যকর করেছে। এমনকি, লিখিত ভাবে সেই প্রতিশ্রুতিও কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর বৈঠকের সময় পাওয়া গেলে সবিস্তারে তা তাঁকে জানানো সম্ভব।”