Rohit Sharma

সাত টেস্টে ১৫২ রান! রোহিতের এই দুরবস্থা কেন, কোথায় সমস্যা হচ্ছে ভারত অধিনায়কের

২০২৩ সালের পর থেকে রান পাচ্ছেন না রোহিত শর্মা। শেষ সাতটি টেস্টে মাত্র ১৫২ রান করেছেন তিনি। কেন এই দুরবস্থা ভারত অধিনায়কের? কোথায় সমস্যা হচ্ছে তাঁর?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:১২
Share:

রোহিত শর্মা। —ফাইল চিত্র।

শেষ সাতটি টেস্টে ১৩টি ইনিংসে ১৫২ রান করেছেন রোহিত শর্মা। গড় মাত্র ১১.৬৯। রোহিতের মতো ব্যাটারের কাছে এটি মোটেও ভাল বিজ্ঞাপন নয়। কারণ, তার আগের চার বছরেই টেস্টে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়ে উঠেছিলেন রোহিত। তাঁর পরিসংখ্যান সে কথা বলে। তা হলে কী এমন হল যাতে এক বছরে এতটা খারাপ অবস্থা হল তাঁর। কোথায় সমস্যা হচ্ছে রোহিতের?

Advertisement

২০১৯ সালের আগে রোহিত টেস্টে মিডল অর্ডারে খেলতেন। সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি তিনি। তাঁর টেস্ট কেরিয়ার বাঁচাতে সেই সময় ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে, রোহিতকে ওপেনার হিসাবে খেলানো হবে। সেই এক সিদ্ধান্ত তাঁর কেরিয়ার বদলে দেয়। সেই সময় শুধু টেস্টে নয়, সাদা বলের ক্রিকেটেও ওপেনার হিসাবে দাপট দেখাচ্ছেন এই ডানহাতি ব্যাটার।

ওপেনিংয়ে চ্যালেঞ্জে লেটার পান রোহিত

Advertisement

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রোহিতের ব্যাটিং গড় ছিল ৫৫.৯৫। সেই সময় পেসারদের বিরুদ্ধে টেস্টে ৩৯টি ইনিংসে ১২৫৩ রান করেছিলেন রোহিত। খেলেছিলেন ২২৯৯টি বল। আউট হয়েছিলেন ২২ বার। পেসারদের বলে প্রতি বার আউট হওয়ার আগে গড়ে ১০৫টি করে বল খেলতেন রোহিত। এই সময়ে টেস্টে অন্তত ২০টি ইনিংস খেলা ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় ছিল রোহিতের।

১২ মাসে বদলে গিয়েছে ছবি

শেষ ১২ মাসে পরিসংখ্যান পুরো উল্টো। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে ২৫টি ইনিংসে পেসারদের বিরুদ্ধে মাত্র ২৯৬ রান করেছেন রোহিত। তিনি খেলেছেন ৪৬৭টি বল। আউট হয়েছেন ১৬ বার। গড় ১৮.৫০। প্রতি বার আউট হওয়ার আগে মাত্র ২৯টি বল খেলেছেন রোহিত। কেন এতটা বদলে গেল পরিসংখ্যান? কোথায় সমস্যা হচ্ছে?

সমস্যার নাম গুড লেংথ

ক্রিকেটে বলা হয়, যে বোলার গুড লেংখে বেশি বল করতে পারেন, তাঁর বিরুদ্ধে রান করা কঠিন। ব্যাটিং ক্রিজ় থেকে ৬-৮ মিটারের এলাকাকে বলা হয় গুড লেংখ। সেখানে বল করলে যেমন সামনের পায়ে সহজে খেলা যায় না, তেমনই পিছনের পায়ে খেলতেও সমস্যা হয়। এই গুড লেংথেই সমস্যায় পড়েছেন রোহিত।

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ২৭ জন ব্যাটার পেসারদের বিরুদ্ধে গুড লেংথে হাজারের বেশি বল খেলেছেন। তাঁদের মধ্যে শ্রীলঙ্কার দিমুখ করুণারত্নে (৬০.৮৮) ও নিউ জ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনের (৫৩.৬৬) পরে সবচেয়ে ভাল গড় রোহিতের (৫৩.১৬)। এই সময়ে বিশ্বের সেরা সাত ব্যাটার গুড লেংথে প্রতি বার আউট হওয়ার আগে ৬৫টি বল খেলেছেন। সেখানে রোহিত প্রতি বার আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ১৩২টি বল। সেটাই গত ১২ মাসে কমে হয়েছে ৩০টি বল।

ভুল শট খেলার প্রবণতা বেড়েছে রোহিতের

রোহিতের পতনের একটা বড় কারণ তাঁর ভুল শট খেলার প্রবণতা। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের সেরা সাত ব্যাটার পেসারদের বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ ভুল শট খেলেছেন। সেখানে রোহিত খেলেছেন ১৯.৩ শতাংশ। শেষ ১২ মাসে গোটা বিশ্ব জুড়েই ব্যাটারদের ভুল শট খেলার প্রবণতা বেড়েছে। ১৭ শতাংশ থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২০.৮ শতাংশ। কিন্তু বাকিদের তুলনায় রোহিতের ভুল শট খেলার প্রবণতা অনেক বেশি বেড়েছে। ১৯.৩ শতাংশ থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২৮.৮ শতাংশ।

বল ছাড়ার পরিমাণ কমেছে রোহিতের

টেস্টে কঠিন পিচে পেসারদের বিরুদ্ধে ভুল শট খেলা নতুন নয়। কিন্তু সেখানে ব্যাটারদের বল ছাড়ার দক্ষতাও থাকতে হয়। আগে রোহিতের তা ছিল। ২০২১ সালে টেস্টে প্রতিটি ইনিংসে প্রথম ৫০টি বলে রোহিত ২০.৪ শতাংশ ভুল শট খেলতেন। কিন্তু পাশাপাশি ২২.৫ শতাংশ বল তিনি ছাড়তেন। মাত্র ১৫.৩ শতাংশ বলে আক্রমণাত্মক শট খেলতেন। ২০২৩ সালের পর থেকে প্রথম ৫০টি বলের মধ্যে ২৮.২ শতাংশ বলে রোহিত আক্রমণাত্মক শট খেলার চেষ্টা করেছেন। মাত্র ১৪ শতাংশ বল তিনি ছাড়ছেন। ফলে ভুল শটের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮.২ শতাংশ। তার কারণেই ২০২১ সালে যেখানে পেসের বিরুদ্ধে প্রতি বার আউট হওয়ার আগে রোহিত ১৮৭ বল খেলেছেন, সেখানে ২০২৩ সালের পর প্রতি ২৯ বলে এক বার করে আউট হয়েছেন তিনি।

দুর্বল রক্ষণ সমস্যায় ফেলেছে রোহিতকে

আগে রোহিতের রক্ষণ জমাট ছিল। কোনও বল ছাড়া বা কোনও বল ডিফেন্ড করার সময় আত্মবিশ্বাস দেখাতেন। তিনি তখনই আক্রমণাত্মক শট খেলতেন যখন বোলারেরা তাঁকে হাত খোলার জায়গা দিতেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে টেস্টে পেসারদের বিরুদ্ধে ৩৯টি ইনিংসে মাত্র ৬ বার ডিফেন্স করতে গিয়ে আউট হয়েছেন রোহিত। খেলেছেন ৭৮৫টি বল। অর্থাৎ, প্রতি বার আউট হওয়ার আগে তিনি খেলেছেন ১৩১টি বল। কিন্তু ২০২৩ সালের পর থেকে ২৩টি ইনিংসে রক্ষণাত্মক শট খেলতে গিয়ে ১১ বার আউট হয়েছেন রোহিত। খেলেছেন মাত্র ১৯৭টি বল। অর্থাৎ, প্রতি বার আউট হওয়ার আগে ১৮টি বল খেলেছেন ভারত অধিনায়ক।

ডিফেন্স করার সময় রোহিতের টেকনিকেও সমস্যা হচ্ছে। যখন তিনি সামনের পায়ে শট খেলতে যাচ্ছেন, তখন তাঁর ব্যাট আগে যাচ্ছে। সেই সময় মাথা অনেকটা পিছনে থাকছে। ব্যাটের সঙ্গে মাথা এগোচ্ছে না। ফলে তাঁর ব্যাট কোথায় রয়েছে তা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে রোহিতের। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়েও তিনি যত বার আউট হয়েছেন, সব গুড লেংথের বল সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে। কখনও বোল্ড হয়েছেন। কখনও এলবিডব্লিউ। আবার কখনও পিছনে ক্যাচ দিয়েছেন। শরীরের আগে ব্যাট যাওয়ায় ঠিক মতো শরীরের ভারও সামনের পায়ে নিয়ে যেতে পারছেন না রোহিত। বয়স তার একটা কারণ। কিন্তু ফিটনেসেও কি সমস্যা হচ্ছে তাঁর? তার ফলেই বার বার ব্যাটে-বলে হচ্ছে না রোহিতের।

খেলার ধরন বদলের খেসারত দিচ্ছেন রোহিত

রোহিতের খেলার ধরনও বদলেছে। এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক তিনি। ২০২৩ সালে ঘরের মাঠে এক দিনের বিশ্বকাপ বা ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, সব জায়গায় প্রথম বল থেকে হাত খুলে খেলছেন তিনি। তার ফলও পেয়েছেন। কিন্তু খেসারতও দিতে হয়েছে। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর পরিসংখ্যান যত ভাল হয়েছে, লাল বলের ক্রিকেটে তত খারাপ হয়েছে। এই পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে, ফরম্যাট বদলে গেলে খেলার ধরনও বদলাতে হয়। সব ফরম্যাটে একই ভাবে খেলা যায় না।

২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টেস্টে ২৪টি ইনিংসে ৯৯৬ রান করেছিলেন করেছিলেন রোহিত। গড় ছিল ৪৫.২৭। দু’টি শতরান ও চারটি অর্ধশতরান করেছিলেন। সেই সময় এক দিনের ক্রিকেটে ১৪টি ইনিংসে ৫১০ রান করেছিলেন তিনি। গড় ছিল ৪২.৫০। একটি শতরান ও তিনটি অর্ধশতরান করেছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে ৮৩টি ইনিংসে ২২০১ রান করেছিলেন রোহিত। ২৭.৫১ গড়ে রান করেছিলেন। ১৪টি অর্ধশতরান ছিল তাঁর ঝুলিতে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পুরো অন্য ছবি। টেস্টে ৩৭টি ইনিংসে ১১৫২ রান করেছিলেন রোহিত। গড় কমে হয়েছে ৩২। চারটি শতরান ও চারটি অর্ধশতরান করলেও গড় চিন্তা বাড়িয়েছে। সেই সময় এক দিনের ক্রিকেটে ২৯টি ইনিংসে ১৪১২ রান করেছেন তিনি। গড় বেড়ে হয়েছে ৫২.২৯। দু’টি শতরান ও ১১টি অর্ধশতরান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে ৪১টি ইনিংসে ১১২৭ করেছেন রোহিত। সেখানেও তাঁর গড় বেড়ে হয়েছে ২৭.৬৫। দু’টি শতরান ও ছ’টি অর্ধশতরান করেছেন ভারত অধিনায়ক।

অস্ট্রেলিয়াতেও একই ছবি

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’টি টেস্টে তিনটি ইনিংস খেলেছেন রোহিত। করেছেন ৩, ৬ ও ১০ রান। অর্থাৎ, তিন ইনিংসে মাত্র ১৯ রান। বার বার অফ স্টাম্পের বলে আউট হয়েছেন। তবে এই দু’টি টেস্টে মিডল অর্ডারে নেমেছিলেন তিনি। তার পরেও রান পাননি। বৃহস্পতিবার থেকে মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। সেখানে রোহিতের ওপেনে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখার রোহিত নিজের খেলার ধরন বদলাতে পারেন কি না। আবার ফর্মে ফিরতে পারেন কি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement