ফাইল চিত্র।
যথেষ্ট আগে জানানো হলে তাঁরা রাষ্ট্রপতি-পদে দলিত সম্প্রদায়ের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থনের বিষয়টি ভেবে দেখতে পারতেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির পদে দ্রৌপদীর জয় কার্যত নিশ্চিত। এই অবস্থায় আদিবাসী-জনজাতি সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্ম ‘সারনা’-কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে এই প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ার কথা। তার পরে রাজ্য সরকার সেটি দাবির আকারে কেন্দ্রের কাছে পাঠাবে।
অনেক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে এনডিএ সরকার। তিনি জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় এর রাজনৈতিক তাৎপর্য বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। রাষ্ট্রপতি-পদে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা। এবং বিরোধী শিবিরের অন্যতম প্রধান শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস। যশবন্ত তৃণমূলেরই নেতা। সেই দিক থেকে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রস্তাবে কর্ণপাত না-করলে পরবর্তী কালে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার পথ খোলা থাকবে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। তেমন ঘটনা ঘটলে তার রাজনৈতিক তাৎপর্য ভিন্নতর খাতে প্রবাহিত হতে পারে।
সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে অতীতে অনেক বার আন্দোলন হয়েছে। ২০২০ সালে ঝাড়খণ্ড এবং বঙ্গে বড় মাপের আন্দোলন করেন বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সাঁওতাল সম্প্রদায় মূলত ‘সারি’ অথবা ‘সারনা’ ধর্মাবলম্বী। দক্ষিণবঙ্গের সাঁওতাল সম্প্রদায় সারি ধর্মের অনুসারী। উত্তরবঙ্গে সারনা ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি। তবে এখনও সারি ও সারনা ধর্মের ‘কোড’ নেই। সেই কারণে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন সরকারি ভাবে ধর্মীয় পরিচয় দিতে পারেন না। নিজেদের ধর্মের ‘কোড’ চালু করার জন্য ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন বহু বছর ধরে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতা রবিন টুডু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের এই আন্তরিক উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। আদিবাসীদের ধর্ম-কোড প্রয়োজন। আশা করি এ বার কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।’’
গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে সারি ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিকে জঙ্গলমহলের ভোট প্রচারে নিয়ে এসেছিল তৃণমূল। গত বছর ঝাড়গ্রামে আদিবাসী ঐক্য মঞ্চের এক সভায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে তৃতীয় বার তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় এলে আদিবাসীদের সারি ধর্ম ও সারনা ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সৌগতবাবুর ব্যাখ্যা, উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা বলছেন তাঁরা হিন্দু নন, তাঁরা সারনা ধর্মের মানুষ। দক্ষিণবঙ্গের আদিবাসীরা বলছেন, তাঁরা সারি ধর্ম অবলম্বন করেন। সৌগতবাবু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা ফের ক্ষমতায় এসে সারি ও সারনা দুই ধর্মকেই আইনি স্বীকৃতি দেব।’’ প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার এ দিনের বৈঠকে বৈরাগ্য, বৈষ্ণব ও চৌধুরী— এই তিনটি পদবিকে ‘ওবিসি’ বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত করারও প্রস্তাব এসেছে।