প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট নিয়ে বারবার বিপত্তি ঘটছে। তাই এ বার আগেভাগে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার।
পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর পথে টেটের প্রশ্নপত্র লোপাটের পরে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নতুন ব্যবস্থায় ১১ অক্টোবর সেই টেট হওয়ার কথা। যাতে আর কোনও বিভ্রাট না-হয়, তা সুনিশ্চিত করতেই কোমর বাঁধছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর ও কলকাতা পুলিশ। এই নিয়ে বুধবার লালবাজারে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসেন শিক্ষাকর্তারা।
প্রশ্নপত্র বিভ্রাটের জেরে সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে দু’-দু’টি বড় পরীক্ষা পিছিয়ে যায় বা স্থগিত রাখতে হয়। প্রথমে ফাঁস হয়ে যায় আইটিআই প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। সেই পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে হয়। তার পরে প্রাথমিকের টেটের প্রশ্নপত্র কলকাতায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতর থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানোর পথে প্রশ্নের একটি প্যাকেট লোপাট হয়ে যায়। দু’মাসের ব্যবধানে এই দু’টি ঘটনায় ব্যাপক হইচই শুরু হয়। আইটিআই প্রবেশিকার প্রশ্ন ফাঁসের পরে টেটেরও প্রশ্নপত্র রাস্তায় পড়ে গিয়েছে, নাকি ফাঁসই হয়েছে— সেই প্রশ্ন তুলে মুখর হয় বিরোধী শিবির। সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেও প্রশ্ন ওঠে, পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতেই কি গোয়েন্দা ডাকা হচ্ছে? প্রশ্নপত্রের প্যাকেটটি সত্যিই বাস থেকে কোনও ভাবে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, নাকি তা লোপাট করে দেওয়া হয়েছিল, সেটা রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রের খবর, টেট হওয়ার কথা ছিল ৩০ অগস্ট। কিন্তু মাত্র দু’দিন আগে সল্টলেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতর থেকে ডাক বিভাগের গাড়িতে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় প্রশ্নপত্রের দু’টি প্যাকেট উধাও হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের পরে সিআইডি জানায়, বাস থেকে রাস্তাতেই ওই দু’টি প্যাকেট পড়ে গিয়েছিল। সিআইডি-র ওই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কুড়ি লক্ষেরও বেশি প্রার্থী। পরীক্ষার্থীদের দুর্ভাবনা দূর করতেই নিশ্ছিদ্র আয়োজন করতে চাইছে পর্ষদ। পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছনো-সহ পরীক্ষার প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এ দিন বৈঠক ডাকা হয়েছিল বলে জানায় লালবাজারের এক কর্তা।
লালবাজার সূত্রের খবর, বৈঠকে যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্রের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা দফতরের সচিব অর্ণব রায় এবং অন্যান্য পদস্থ কর্তা উপস্থিত ছিলেন। কলকাতায় মোট ৩০৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। পরীক্ষার দিন ওই সব কেন্দ্রে যথাযথ ভাবে এবং ঠিক সময়ে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত এবং সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলেন কর্তারা। সেই সঙ্গেই ভুয়ো পরীক্ষার্থী আটকাতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা হচ্ছে।
প্রশ্নপত্র নিয়ে এ বার যাতে আর কোনও প্রশ্ন না-ওঠে, সেই জন্য আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয় এ দিনের বৈঠকে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশ্নপত্র কী ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হবে, নিরাপত্তার স্বার্থে তা গোপন রাখা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সব রকমের নিরাপত্তা নিয়েই কথা হয়েছে।’’ গোটা রাজ্যের পরীক্ষার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আবার বৈঠক হবে নবান্নে।