রবীন্দ্র সরোবরে ছট।—ফাইল চিত্র।
জাতীয় পরিবেশ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, এ বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো করা যাবে না। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে রাজ্য প্রশাসন যুক্তি দিল, পরিবেশ রক্ষা ও ধর্মাচরণের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য থাকা দরকার। তাই রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি দেওয়া হোক।
আজ সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি রোহিংটন নরিম্যানের বেঞ্চ এ বিষয়ে সব পক্ষের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এই মামলার শুনানি। এ বছর ২০-২১ নভেম্বর ছটপুজো। তার চার দিন আগে সুপ্রিম কোর্টে ফয়সালা হবে, এ বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো হবে কি না।
জাতীয় পরিবেশ আদালত গত বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তা অমান্য করে সেখানে পুজো হয়েছিল। সরব হয়েছিলেন পরিবেশকর্মীরা। কিন্তু রাজ্য জানিয়ে দেয়, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা যাবে না। সেখানেই শেষ নয়। চলতি বছরে রবীন্দ্র সরোবরে যাতে ছটপুজো করা যায়, সে কারণে জাতীয় পরিবেশ আদালতে ফের আবেদন করেছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবেদন খারিজ করে আদালত জানিয়ে দেয়, সরোবরে ছটপুজো করা যাবে না। তার পরেই সরকারের তরফে সরোবরে ছটপুজোর অনুমতি পেতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের কথা বলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লোকাল চালানোর ভাবনা, টাইম টেবল প্রকাশ শীঘ্রই
আজ কেএমডিএ-র তরফে আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী যুক্তি দেন, ২০১৭ সালে ১৫ দফা শর্ত রেখে পরিবেশ আদালতই ছটপুজোর অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এ বার তারা সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং ভিডিয়োগ্রাফ না দেখে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ১৬ নভেম্বর মামলার শুনানি হলে প্রস্তুতিতে দেরি হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে বিচারপতি নরিম্যানের বেঞ্চের কাছে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়ার আর্জিও জানান রাকেশবাবু। কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই আর্জি মানেনি।
রাকেশবাবু আরও যুক্তি দেন, পরিবেশের ক্ষতির কথা ভেবে জাতীয় পরিবেশ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের ধর্মাচরণের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে কেএমডিএ শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যত ‘অগ্রাহ্য’ করে সরকার যে ভাবে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে, তাতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ সংগঠনগুলির বক্তব্য, সরকারের এই ‘তুঘলকি আচরণ’ আদতে আদালতের অবমাননা। কারণ পরিবেশ আদালতের নির্দেশেই অতীতে পাঁচ জন বিশেষজ্ঞের কমিটি রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশগত সমীক্ষা করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, যে কোনও অতিরিক্ত জনসমাগম সরোবরের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে স্কুল-কলেজ খোলার ভাবনা, রাজ্যে ছাড় মিলল বেশ কিছু ক্ষেত্রে
যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ছটপুজোর জন্য রবীন্দ্র সরোবরের জল ও সেখানকার পরিবেশ যাতে দূষিত না হয়, সেই ব্যাপারটি দেখা হবে। দূষণ রোধে দ্রুত সরোবর পরিষ্কার করা হবে। তা ছাড়া অন্যত্রও ছটপুজোর আয়োজন হয়েছে। গত বছরের ১৫টি জায়গা থেকে বাড়িয়ে এ বার প্রায় ২০টি জায়গায় তা করা হচ্ছে। এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বিকল্প সব ব্যবস্থা রাখছি।’’ যদিও এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘যেখানে পুজো করার উপরেই নিষেধাজ্ঞা আছে, সেখানে সরোবর পরিষ্কারের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?’’ আর এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘আসলে ভোটের সমীকরণ কাজ করেছে। তাই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত।’’