পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্ত ঠেকাতে মরিয়া রাজ্য সরকার। প্রতীকী ছবি।
কলকাতা হাই কোর্টের দু’-দু’টি সিঙ্গল বা একক বেঞ্চের দুই বিচারপতি বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই বিষয়ে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করেছে সিবিআই। কিন্তু গরু ও কয়লা পাচার থেকে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় তদন্তভার ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে যাওয়ায় বিপাকে পড়া রাজ্য সরকার অন্তত পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্ত ঠেকাতে মরিয়া। তাই হাই কোর্টের ডিভিশন বা যৌথ বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ বেঞ্চে তার শুনানি হতে পারে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে প্রোমোটার অয়ন শীলের বাড়ি থেকে পুর নিয়োগ দুর্নীতির হদিস পায় ইডি। বিষয়টি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে জানানোর পরে তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির দু’টি মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে অমৃতা সিংহের এজলাসে যায়। পুর নিয়োগের মামলাটিও সেখানেই গিয়েছিল। গত সপ্তাহে বিচারপতি সিংহও রায় দেন, পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সিবিআই করবে।
রায়ে বিচারপতি সিংহ উল্লেখ করেছিলেন, স্কুল নিয়োগ এবং পুর নিয়োগের অভিযুক্তেরা প্রায় একই। অপরাধের ধরনও প্রায় এক। এই পরিস্থিতিতে তদন্তের দায়িত্ব একই সংস্থার হাতে থাকা উচিত। তাতে তদন্ত দ্রুত ও মসৃণ গতিতে এগোবে। পৃথক পৃথক সংস্থা একই বিষয়ে তদন্ত করলে অভিযুক্তেরা যে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চালাতে পারে, সেই আশঙ্কাও প্রতিফলিত হয়েছিল বিচারপতি সিংহের রায়ে। যদিও রাজ্য সরকারের কৌঁসুলিরা এই বক্তব্যে অনড় ছিলেন যে, আইনশৃঙ্খলার বিষয় যে-হেতু রাজ্যের এক্তিয়ারে, তাই এই তদন্ত করবে রাজ্য পুলিশ।
আইন শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের অনেকের পর্যবেক্ষণ, এই ধরনের দুর্নীতির পিছনে রাজ্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কেউ কেউ যুক্ত থাকতে পারেন। স্কুল নিয়োগ দুর্নীতিতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই মামলায় কিছু মন্ত্রী, শাসক দলের নেতা এবং উচ্চপদস্থ আধিকারিক জেলবন্দি। পুর নিয়োগের তথ্য মিলেছে শাসক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়নের বাড়িতে। তাই রাজ্য পুলিশ আদৌ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে কি না, সেই প্রশ্ন জোরদার হয়েছে জনমানসে। সেখানে কেন্দ্রীয় সংস্থা নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করবে বলেই জনগণের আশা।
পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যে মামলা রুজু করার সঙ্গে সঙ্গে সিবিআই জেলে গিয়ে অয়নকে লম্বা জেরাও করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পুর দফতরের নিয়োগের টেন্ডার বা দরপত্র ডাকার কাজে কয়েক জন আধিকারিক ও প্রভাবশালীর নাম জড়িত বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। বিশেষত দরপত্র সংক্রান্ত কাজে পুর দফতরের অধীন একটি সংস্থার শীর্ষ কর্তা এবং প্রভাবশালীর যোগ স্পষ্ট বলে ওই সূত্রের দাবি।
এই পরিস্থিতিতে সিবিআই তদন্ত ঠেকাতে রাজ্য সরকারের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আইনজীবী মহলে। সরকার এত বিরাট মাপের দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দিতে রাজি নয় কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন বিরোধী শিবিরের লোকজনও। অনেকেরই বক্তব্য, দুর্নীতি হয়ে থাকলে সরকারের দায়িত্ব তা উন্মোচন করে সংশোধনের পথে হাঁটা। কিন্তু এই সরকার যে-ভাবে আইনি লড়াইয়ে সিবিআই-কে আটকাতে চাইছে, তাতে কারও কারও এটা মনে হতেই পারে যে, দুর্নীতির পর্দাফাঁস যাতে না-হয়, সেই জন্যই শাসক শিবিরের এই তৎপরতা।