ফাইল চিত্র।
খোদ মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বা ‘সামলে চালান, প্রাণ বাঁচান’ স্লোগান দিয়ে রাজ্যে প্রচার শুরু হয়েছে মাস কয়েক আগে। কিন্তু পথ-দুর্ঘটনা ঠেকানোর সেই উদ্যোগে কাজের কাজ যে বিশেষ হয়নি, সোমবার আলিপুরে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা তারই প্রমাণ। মঙ্গলবারেও কলকাতার তিন প্রান্তে তিন জনের প্রাণ গিয়েছে সেই পথ-দুর্ঘটনায়।
এই পরিস্থিতিতে পথ-নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার, আরও কঠোর করতে একটি নতুন আইন করছে রাজ্য সরকার। নবান্নের খবর, সব ঠিকঠাক থাকলে বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই বিল আনা হবে। তার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড সেফটি বিল, ২০১৬’।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর গোটা দেশে পথ-দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন গড়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। দুর্ঘটনা ঘটছে দৈনিক গড়ে ১২১৪টি। এই তালিকায় বেশ উপরের দিকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মন্ত্রকের এই রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। দুর্ঘটনা এবং তাতে প্রাণহানি নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্টও। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছে তারা।
কেন্দ্র ও আদালতের নির্দেশ মেনে পথ-নিরাপত্তা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে অনেক রাজ্য। তৈরি হয়েছে পথ-নিরাপত্তা আইন। একই উদ্দেশ্যে এ বার নতুন আইন করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘এক শ্রেণির চালকের বেপরোয়া মনোভাবের জন্য পথ-দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না।’’ নবান্নের একাংশের মতে, শুধু ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ প্রচারে চালক ও নাগরিকদের যথেষ্ট সচেতন করা যাচ্ছে না। মাসখানেক আগে নবান্নে এক বৈঠকে রাজ্যের পথ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অবশেষে তাঁরই নির্দেশে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
রাজ্যের পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন আইনে একটি ‘রোড সেফটি অথরিটি’ বা পথ-নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ নামে একটি সংস্থা গড়া হবে। তার মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব। ওই সংস্থায় থাকবেন পুলিশ, পরিবহণ, শিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা। একই ভাবে জেলা স্তরে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের নেতৃত্বে একটি করে ‘ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কাউন্সিল’ বা জেলা পথ-নিরাপত্তা পরিষদ গড়া হবে। কলকাতায় এই পরিষদের মাথায় থাকবেন পুলিশ কমিশনার নিজেই। জেলা-ভিত্তিক পথ-দুর্ঘটনার যাবতীয় তথ্য একত্র করে পাঠানো হবে সরকারের কাছে। তারা সমীক্ষা চালিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।
‘‘নতুন আইনের আওতায় একটি তহবিল তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। সড়কপথে আইন ভাঙলে যে জরিমানা নেওয়া হয়, তারই একটি অংশ গিয়ে জমা হবে ওই তহবিলে। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারও ওই তহবিলে অর্থ বরাদ্দ করবে,’’ বললেন পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা।
কী ভাবে খরচ হবে সেই অর্থ?
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, পথ-নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রচার, যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ করা হবে ওই তহবিলের টাকা। পাশাপাশি পথ-নিরাপত্তার হালহকিকত জানতে সমীক্ষা চালাতে হলে তার খরচও আসবে তহবিল থেকে। আবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরিকাঠামো তৈরির টাকাও জোগাবে ওই তহবিল।