প্রতীকী ছবি।
শহরের মধ্যে অথবা ঘন জনবসতিপূর্ণ অন্যান্য এলাকায় ‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ ব্যবহার করে রাস্তা তৈরি করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল বা জাতীয় পরিবেশ আদালত। এই অবস্থায় দূষণের মাত্রা কমিয়ে নতুন পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ প্রযুক্তি পুরোপুরি অস্বীকার না-করলেও তার ব্যবহারে পরিবর্তন আনা হবে বলে রাজ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ট্রাইবুনালকে। নতুন পদ্ধতি স্থির করতে একটি কমিটি গঠন করেছে পূর্ত দফতর। শহর ও অন্যত্র রাস্তা তৈরিতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির তদারক করবে সেই
কমিটি। রাস্তা তৈরিতে বর্জ্য প্লাস্টিক এবং জিয়ো-সিন্থেটিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাধারণ পিচ (বিটুমিনাস টপ) বা ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট প্রযুক্তির রাস্তা তৈরি করতে এত দিন নির্মাণ এলাকার কাছেই ‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ বসানো হত। তার বেরোনো কালো ধোঁয়া মারাত্মক ক্ষতি করত পরিবেশের। নতুন ব্যবস্থায় এতে দু’টি বদল আসছে। ১) জনবসতি বা শহর থেকে দূরে ‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ বসিয়ে রাস্তার উপাদান তৈরি করা। ২) পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি (ডিভাইস) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ থেকে নির্গত কার্বনের মাত্রা যথাসম্ভব কম করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ট্রাইবুনালের চাপে রাস্তা তৈরির উপাদান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। তার প্রথম পর্যায়ে প্লাস্টিক ব্যবহারের পাশাপাশি কোনও রাস্তার পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারে সেই রাস্তায় ব্যবহৃত উপাদান পুনর্ব্যবহার করা হবে। পূর্তকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাস্তার উপরিভাগ চেঁছে তুলে নিয়ে তা মেশিনের মাধ্যমে ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব। তা দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে নরম মাটিতে রাস্তা তৈরি করতে হলে প্রচুর পাথর ব্যবহার করতে হয়। নতুন প্রযুক্তিতে নরম মাটিকে শক্ত করতে হলে বাড়তি পাথরের ব্যবহার করতে হবে না। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘উন্নত দেশগুলি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তা তৈরির খরচ এবং দূষণ, দু’টিই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে।’’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবিষ্যতে রাস্তা তৈরির বরাত দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলি বাধ্যতামূলক করা হবে। সব ঠিকাদার সংস্থাই ট্রাইবুনাল এবং সরকারের বিধি মেনে রাস্তা তৈরিতে বাধ্য থাকবে। এতে প্রাথমিক ভাবে খরচ কিছুটা বাড়লেও শেষ পর্যন্ত তা সাশ্রয়ে সহায়ক হবে। শহরের বাইরে ‘হট মিক্স প্ল্যান্ট’ বসালে রাস্তা তৈরির উপাদান নির্মাণস্থলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বসানোর খরচও রয়েছে। কিন্তু এক বার পদ্ধতিটি চালু হয়ে গেলে নতুন করে আর খরচ করতে হবে না।
এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলি নিখুঁত ভাবে বাস্তবায়িত হলে রাস্তার স্থায়িত্ব এবং ‘রাইডিং কোয়ালিটি’ বা গুণগত মান এক ধাক্কায় অনেক গুণ বেড়ে যাবে। তাতে খরচ কিছুটা বাড়লেও বার বার সারাইয়ের ঝামেলা না-থাকায় খরচ শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। ‘‘অতীতে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তার রাইডিং কোয়ালিটি নিয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। এ বার তা মানা যাবে বলেই মনে হয়,’’ বলেন ওই আধিকারিক।