বকেয়া ডিএ-র দাবিতে দু’দিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। ফাইল চিত্র।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি চলছে রাজ্যের সরকারি অফিসে। সোমবার সকাল থেকেই কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে কোথাও কোথাও। আবার কোথাও কর্মবিরতির কোনও প্রভাবই পড়েনি বলে দাবি করেছে সরকারপক্ষ। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে কর্মবিরতির প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করা হয়েছে। অন্য দিকে, মহাকরণে অনেক কর্মীই কাজ করছেন না বলে জানিয়েছেন। সপ্তাহের প্রথম দিনে রাজ্য সরকারি অফিসের ছবিটা এ রকমই।
কেন্দ্রীয় হারে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়ার দাবি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও চলছে। আগামী ১৫ মার্চ ডিএ মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তার আগে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। কলকাতার শহিদ মিনারে তাঁদের ধর্না-অবস্থান চলছে। গত ১১ দিন ধরে চলছে অনশনও। কয়েক জন অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যেই রাজ্য বাজেট পেশের সময় সরকারি কর্মীদের ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। পুরো বকেয়া মেটানোর দাবিতে অনড় সরকারি কর্মীদের একাংশ। এই দাবিতে সোম এবং মঙ্গলবার রাজ্য সরকারি অফিসে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ-সহ ৩২টি সংগঠন। মঙ্গলবার এই কর্মবিরতিতে যোগ দেবে কো-অর্ডিনেশন কমিটি-সহ আরও কয়েকটি সংগঠন। মোট ৩৮টি সংগঠন এই কর্মবিরতিতে শামিল হবে।
সোমবার সকাল থেকেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। মহাকরণে অনেক সরকারি কর্মীকেই দেখা গিয়েছে, যাঁরা হাজিরা দিয়েছেন অথচ কাজ করছেন না। এক কর্মীর কথায়, ‘‘কাজ করার কোনও ইচ্ছা নেই। আমাদের দাবি ন্যায্য। কোনও কাজ করব না। তবে যদি কোনও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল থাকে, তা সই করব। কারণ আমরা চাই না, সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা হোক।’’ মহাকরণে এমন কর্মীদেরও দেখা গিয়েছে, যাঁরা ডিএ-র দাবির পক্ষে, অথচ তাঁরা কর্মবিরতি করছেন না। তেমনই এক কর্মীর কথায়, ‘‘ডিএ চাই আমরা। কিন্তু আমাদের কাজ মানুষের জন্য। তাই মানুষের স্বার্থে কাজ করছি।’’ কর্মবিরতির প্রথম দিন মহাকরণের ছবিটা এমন হলেও নবান্নে কাজকর্ম স্বাভাবিক রয়েছে বলেই দাবি করেছে সরকারপক্ষ।
তবে কর্মবিরতির ভাল প্রভাব পড়েছে বলে দাবি করেছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতা তাপস চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘‘খাদ্য দফতর, ক্রেতা সুরক্ষা দফতর, জল সম্পদ উন্নয়ন দফতরে কর্মবিরতির ভাল প্রভাব পড়েছে।’’ আবার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদে কর্মবিরতির কোনও প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করা হয়েছে। পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি সুব্রত ঘোষ বলেছেন, ‘‘সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আমাদের এখানে কর্মবিরতির প্রভাব নেই। সবাই অফিসে এসে কাজ করছেন, সবাই ব্যস্ত।’’
সরকারি কর্মীদের একাংশের এই কর্মবিরতির মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে নবান্ন। এই দু’দিন সমস্ত সরকারি অফিস খোলা থাকবে এবং জরুরি কারণ ছাড়া কোনও ছুটি মঞ্জুর করা যাবে না। তার পরও যদি কোনও কর্মী ছুটি নেন, তা হলে তাঁর বেতন কাটা যাবে। এমনকি, কর্মজীবন থেকে বাদ যাবে একটি দিন। সরকারের এই হুঁশিয়ারির পরও কর্মবিরতি পালনে মরিয়া সরকারি কর্মীদের একাংশ।
তৃণমূলের কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘গত ১১ বছরে ধর্মঘট, ধর্না, বন্ধের বদলে কর্মসংস্কৃতি ফিরেছে। ডিএ সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য। কিন্তু এর জন্য সেই পুরনো পথে হাঁটা ঠিক নয়।’’ সরকারি কর্মীদের ডিএ-র দাবিতে বিধানসভায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল।