রাজ্য স্বাস্থ্য-তথ্য দেয়নি, নালিশ নীতি আয়োগের

দেশের ২৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্যের হালহকিকত কেমন, তার ইঙ্গিত রয়েছে ‘হেলথি স্টেটস, প্রোগ্রেসিভ ইন্ডিয়া’ নামে প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্টে।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৬
Share:

রাজ্যের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ আনল নীতি আয়োগ।

দেশের অন্যান্য রাজ্যের নিরিখে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নম্বর কমেছে পশ্চিমবঙ্গের। শুধু তা-ই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’ বা নীতি আয়োগের অভিযোগ, স্বাস্থ্যের তথ্য দেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং নরেন্দ্র মোদীর সরকারের নীতি আয়োগের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত স্বাস্থ্যসূচকের রিপোর্টেই এই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যে বাংলার নম্বর হ্রাসের কথা বলা হয়েছে।

Advertisement

দেশের ২৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্বাস্থ্যের হালহকিকত কেমন, তার ইঙ্গিত রয়েছে ‘হেলথি স্টেটস, প্রোগ্রেসিভ ইন্ডিয়া’ নামে প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্টে। তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ নীতি আয়োগের পোর্টালে কোনও তথ্য দেয়নি! রিপোর্ট তৈরি হয়েছে মোট ২৩টি স্বাস্থ্যসূচকের ভিত্তিতে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে স্বাস্থ্যসূচক নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলন করেন নীতি আয়োগের সিইও। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে স্থির হয়, ২০১৯ সালের রিপোর্টের

জন্য ২০১৫-১৬ সালকে ‘বেস ইয়ার’ বা ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে। ‘রেফারেন্স ইয়ার’ বা মূল্যায়ন বর্ষ হবে ২০১৭-১৮। ওই বৈঠকেই নীতি আয়োগের পোর্টালে তথ্য দেওয়ার

Advertisement

জন্য রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছিল। এই কাজে সহযোগিতার জন্য প্রতিটি রাজ্যের জন্য এক জন মেন্টর নিয়োগ করা হয়। রিপোর্ট জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ তথ্য না-দেওয়ায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সার্বিক এবং ‘ইনক্রিমেন্টাল পারফরম্যান্স’ বা ক্রমান্বয় সাফল্যের হার নির্ণয়ে ১২টি সূচকের জন্য ‘প্রি-ফিলড’ তথ্য এবং ১১টি সূচকের ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষের তথ্য মূল্যায়ন বর্ষে পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।

নীতি আয়োগের স্বাস্থ্যসূচক অনুযায়ী ভিত্তিবর্ষের তুলনায় স্বাস্থ্যে এক ধাপ নীচে নেমে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ভিত্তিবর্ষে ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ছিল ১০ নম্বরে, মূল্যায়ন বছরে তা হয়েছে ১১। রিপোর্টের মার্কশিট অনুযায়ী সদ্যোজাতের মৃত্যু এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুর মৃত্যুর হারে এ রাজ্য উন্নতি করেছে। কিন্তু কন্যাশ্রী প্রকল্পের পরেও প্রতি হাজারে শিশুকন্যার জন্মের হারে এ রাজ্যের অবস্থা ‘মোস্ট ডিটোরিয়েটেড’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অপুষ্টির হারে ভিত্তিবর্ষের তুলনায় মূল্যায়ন বছরে কোনও উন্নতি হয়নি। যক্ষ্মারোগী নির্ণয়ে রাজ্যের মার্কশিটে লেখা রয়েছে, ‘ইমপ্রুভড’। তবে ওই রোগের চিকিৎসায় সাফল্যের হার ‘ডিটোরিয়েটেড’! রিপোর্টের দাবি, টিকাকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে এ রাজ্যের কোনও উন্নতি নেই।

নীতি আয়োগের স্বাস্থ্যসূচক অনুযায়ী তৈরি রিপোর্টে মোদী সরকারের উদ্দেশেও কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন রয়েছে। রিপোর্টে ২১টি বড় রাজ্যের মধ্যে ৭৪.০১ পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষে রয়েছে কেরল, ২৮.৬১ পয়েন্ট নিয়ে সকলের শেষে উত্তরপ্রদেশ। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কেরল ও উত্তরপ্রদেশের এই ব্যবধান কমার কোনও ইঙ্গিত যে মেলেনি, তা রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে। কেরল প্রথম হলেও ভিত্তিবর্ষের তুলনায় মূল্যায়ন বছরে তাদের নম্বর কমেছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিকের কটাক্ষ, ‘‘তা হলে আয়ুষ্মান ভারত করে লাভ কী হল!’’

এই তর্কের মধ্যে না-ঢুকে স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘নীতি আয়োগ যে-সব মাপকাঠিতে স্বাস্থ্যসূচক তৈরি করেছে, তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভবন একমত নয়। ওরা বলছে, নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুরে স্বাস্থ্যের হাল খারাপ। মালদহ, মুর্শিদাবাদ বললে তবু মেনে নিতাম। কিন্তু নদিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের ক্ষেত্রে তা কখনওই মানা সম্ভব নয়। এই ধরনের বিষয় ওদের সংশোধন করে নিতে বলা হয়েছিল। নীতি আয়োগ তা শোনেনি বলে আমরাও আগ্রহ দেখাইনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement