Mamata Banerjee

জঙ্গি: বিএসএফকেই তির

নবান্নে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে অনুপ্রবেশের দায় সরাসরি বিএসএফ এবং কেন্দ্রের উপরে ফের চাপিয়েছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪২
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য থেকে একের পর এক সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’ এবং অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ার পরে কেন্দ্রের ব্যর্থতার দিকে আগেই আঙুল তুলেছিল রাজ্য সরকার ও শাসক দল। এ বার সরাসরি কেন্দ্রের ‘নীল-নকশা’ এবং বিএসএফ-ই রাজ্যে ‘লোক, গুন্ডা’ ঢোকাচ্ছে বলে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুর শোনা গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও। বিএসএফ সূত্রে যদিও একে ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিরোধীরাও রাজ্যের শাসক দলের এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisement

নবান্নে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে অনুপ্রবেশের দায় সরাসরি বিএসএফ এবং কেন্দ্রের উপরে ফের চাপিয়েছেন মমতা। তিনি বলেছেন, “বিএসএফ ইসলামপুর, সিতাই, চোপড়া-সহ নানা জায়গা দিয়ে লোক ঢোকাচ্ছে। বিএসএফ মেয়েদের উপরে অত্যাচার করছে। সীমান্ত-রক্ষা তৃণমূল বা পুলিশ করে না। সেটা বিএসএফের হাতে। এখানে গুন্ডা পাঠানো হচ্ছে! সীমান্ত দিয়ে এসে খুন করে চলে যাচ্ছে। এটা বিএসএফের অনেক ভিতরের কাজ। এর মধ্যে কেন্দ্রের একটা নীল-নকশা আছে। রাজ্যকে অশান্ত করতে কেউ জঙ্গি-হানাকে মদত দিলে, প্রতিবাদ করতেই হবে। কড়া চিঠি লিখব।” বিমানে করে বাইরে থেকে যাঁরা এই রাজ্যে আসছেন, তাঁদের তালিকা কেন্দ্র এখন দেয় না বলেও অভিযোগ তুলেছেন মমতা। কোন কোন এলাকা দিয়ে বিএসএফ ‘লোক ঢোকাচ্ছে’, তা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজিরাজীব কুমারের কাছে রিপোর্টও চেয়েছেন তিনি।

বিএসএফ সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। যে বক্তব্যের সারবত্তা নেই, তা নিয়ে মন্তব্য করা নিষ্প্রয়োজন। একটি সূত্রের এ-ও দাবি, মালদহে তৃণমূল নেতার মৃত্যুর পিছনে তৃণমূলের ‘রেষারেষি’ রয়েছে বলে মনে করছে কেন্দ্র। তা ধামাচাপা দিতেই বিএসএফের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কৌশল নিয়েছেন মমতা।

Advertisement

জেলার পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “প্রতিবাদ হয়নি কেন? (অনুপ্রবেশকারীরা) যখন ঢুকে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, সেই তথ্য পুলিশ, জেলাশাসকের কাছে থাকে। মনোজ, (রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ) তুমি কোনও তথ্য পেয়েছ? পাওনি। তার মানে ডিএম, এসপি-রা দায়িত্বপালন করেনি।”

মমতার মতোই একই সুরে তোপ দেগেছেন অভিষেকও। ডায়মন্ড হারবারে এ দিন তিনি বলেছেন, “বাংলাকে অশান্ত করতে জঙ্গিদের ঢুকিয়েছিল বিএসএফ। বাংলার পুলিশ সহযোগিতা না-করলে জঙ্গি ধরা পড়ত না। রাজ্য পুলিশ ধরেছে।

অসমে এত জন ধরা পড়েছে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল করেন?” বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-‘নির্যাতন’ নিয়ে কেন্দ্র কেন চুপ, সেই প্রশ্নও ফের তুলেছেন অভিষেক।মুখ্যমন্ত্রী ও শাসক দলের এই অভিযোগ নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বালুরঘাটে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া, জেলাশাসকেরা শৌচাগারে পর্যন্ত যেতে পারেন না! তাঁরা কেন্দ্রের হয়ে রাজ্যে জঙ্গি ঢোকাবেন? কাঁটাতার দিতে বিএসএফ-কে যাঁরা সহযোগিতা করেন না, তাঁরাই এখন রাজনীতি করতে দোষ চাপাচ্ছেন।” ব্যারাকপুরে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহও মন্তব্য করেছেন, এই রাজ্য এখন অনুপ্রবেশকারীদের ‘নার্সারি’তে পরিণত হয়েছে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর মতে, “অসম, জম্মু-কাশ্মীর থেকে পুলিশ এসে জঙ্গি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিএসএফ, পুলিশ সীমান্ত খুলে দিয়ে দেশ-বিরোধী কাজের জন্য জঙ্গিদের ঢুকতে সাহায্য করবে, এটা বিশ্বাস করা যায় না। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে এই সব বলে লাভ নেই। বাংলায় আইনশৃঙ্খলা নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement