—ফাইল চিত্র
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর কলকাতা পুরসভার ভোট করানোর প্রশ্নে সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন কার্যত দোটানায় পড়েছে। এ নিয়ে আগামী সোমবার নির্বাচন কমিশনকে মতামত জানাবে নবান্ন। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীরা পরিস্থিতির বিচারে বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতা পুর নির্বাচন করাতে উৎসাহী নন। তাঁরা চান, কমিশন আদালতকে জানাক, এখনই আর ভোট করানো সম্ভব নয়। অন্যদিকে কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম কলকাতা পুরসভার ভোট এখনই করিয়ে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসের সঙ্গে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মতামতের দিকে তাঁরাও তাকিয়ে রয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
যদিও কলকাতার পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দ্রুত কলকাতার ভোট করিয়ে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও দলের অন্দরে তিনি জানিয়েছেন, নির্বিঘ্নে ভোট করালে কিছু আসন কমলেও ক্ষমতায় তৃণমূলই ফিরবে। তা দেখিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে হইহই করে নেমে পড়া যাবে। তবে ‘নির্বিঘ্নে’ ভোট হবে এমন নিশ্চয়তা শাসক দল বা প্রশাসন কেউই দিতে পারছেন না। তা না হলে লাভের অঙ্কে চেয়ে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়ে যেতে পারে বলেও শাসক দলের নেতারা মনে করছেন। সঙ্গে রয়েছে অন্য পুরসভাগুলিতেও আদালতের ভোটের নির্দেশ দেওয়ার প্রসঙ্গ।
কমিশন সূত্রের দাবি, এখন কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকার কাজ চলছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। তারপরে সেই তালিকা নিজেদের মতো তৈরি করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আট থেকে দশ দিন লাগবে। পর্যবেক্ষকদের মতে এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে সব নিয়ম মেনে ফেব্রুয়ারির শেষের আগে কলকাতা পুরভোট অনুষ্ঠিত হওয়া কার্যত অসম্ভব। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের জন্য সক্রিয় হয়েছে। কাজেই ফেব্রুয়ারিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে কলকাতা পুরনিগমের ভোট নতুন করে ‘জটিলতা’ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
কমিশনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র কলকাতা পুরভোট এখনই করাতে সম্মত হলে সুপ্রিম কোর্টে আরও জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়ে অন্য পুরসভাগুলির ভোট করানোর দাবি উঠতে পারে। সঙ্গত কারণে যদি আদালত সমস্ত পুরসভার ভোট করানোর নির্দেশ দেয়, তা হলে বিধানসভা ভোটের মাস দেড়েক আগে কার্যত একটি ‘মিনি’ সাধারণ নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে। পঞ্চায়েত ভোটের অভিজ্ঞতার পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন বা নবান্নের কর্তারা কেউই কলকাতা বা অন্যান্য পুরভোট করাতে পক্ষপাতী নন।
এক কর্তার কথায়, ‘‘সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচনার উপরেই আমরা কলকাতা পুরভোটের ভবিষ্যত ছেড়ে দিতে চাই।’’