২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকেই বেসরকারি ডিস্ট্রিবিউটর ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু হয়। গত ১৬ নভেম্বর বিধাননগরের শুভান্ন ভবনে এই সংক্রান্ত নীতি গ্রহণের জন্য একটি বৈঠক হয়। তার আগে ৯ নভেম্বর একটি নির্দেশ জারি করে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের জন্য আবেদন পত্র চাওয়া হয়।
ডিস্ট্রিবিউটর চাই। মরিয়া রাজ্য। প্রতীকী চিত্র।
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ পর্যন্ত জেলায় জেলায় খুচরো দোকানে দেশি কিংবা বিলিতি মদ পৌঁছে দিতে আড়াইশোর বেশি ডিস্ট্রিবিউটার ছিল রাজ্যে। কিন্তু সে সব এখন অতীত। পরিস্থিতি বদলে যায় ২০১৭ সাল থেকে। সেই বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যে দেশি ও বিলিতি মদের মূল ডিস্ট্রিবিউটার হিসেবে কাজ শুরু করে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন (বেভকো)। রাজ্য সরকারের আবগারি দফতরের অধীনস্থ সংস্থা বেভকো হয়ে ওঠে মদের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর। কিন্তু এখন ফের অতীতে ফিরতে চাইছে আবগারি দফতর। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের তৎপরতা শুরু হয়েছে। তৃতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে মদের ডিস্ট্রিবিউটার হতে আগ্রহী সংস্থাকে আবেদনের জন্যও বলা হয়েছে। এই বিষয়ে দফতরের কর্তারা মুখ খুলতে না চাইলেও জানা গিয়েছে, সরকারই মদ বিক্রির মূল ডিস্ট্রিবিউটার এমন কটাক্ষ থেকে মুক্তি পেতেই এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে দফতর মনে করছে, পুরনো ব্যবস্থা ফেরালে সরকারি দায় কমিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে।
২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকেই বেসরকারি ডিস্ট্রিবিউটর ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু হয়। গত ১৬ নভেম্বর বিধাননগরের শুভান্ন ভবনে এই সংক্রান্ত নীতি গ্রহণের জন্য একটি বৈঠক হয়। তার আগে ৯ নভেম্বর একটি নির্দেশ জারি করে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের জন্য আবেদন পত্র চাওয়া হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। শুভান্নের বৈঠকেই ঠিক হয় প্রয়োজনীয় নীতি বদল করে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের পথে হাঁটায় জোর দেবে রাজ্য। ডিস্ট্রিবিউটরদের কী হারে কমিশন দেওয়া হবে তা যেমন ঠিক হয়, তেমনই এটাও ঠিক হয়েছিল যে, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত কোনও ডিস্ট্রিবিউটর চাইলে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় থাকা দফতরের গুদামঘর ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। ঠিক হয়, মদ প্রস্তুতকারী সংস্থারা নিজেরাই পছন্দ মতো ডিস্ট্রিবিউটর বেছে নিতে পারবে।
উদ্যোগী হলেও পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া যে খুব সহজ হবে না সেটা অবশ্য নভেম্বরেই টের পায় আবগারি দফতর। তেমন সাড়া না মেলায় ৩০ নভেম্বর ফের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে আবেদন পত্র জমা নেওয়ার সময়সীমা ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এর পরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আবগারি দফতরের কমিশনার উমাশঙ্কর এস ফের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা জেলায় জেলায় পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, আবগারি দফতরের নিয়ম মেনে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউটর হতে আবেদন করতে হবে। আগামী তিনটি আর্থিক বছরের জন্য যোগ্য সংস্থাকে রাজ্যের মধ্যে ব্যবসা করার জন্য দেশি ও বিলিতি মদের ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করতে মরিয়া হলেও তাতে কতটা সাড়া মিলবে তা নিয়ে অবশ্য নিশ্চিত নয় আবগারি দফতর। জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাসের চেষ্টায় এখনও পর্যন্ত খুবই কম আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে হাতে গোণা কয়েকটি সংস্থাই আগেও মদের ব্যবসায় যুক্ত ছিল। বাকিরা নতুন। আবগারি দফতরের এক কর্মীর দাবি, ‘‘সমস্যা হল, নিয়ম অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে আবেদন করতে চাইছে না অনেক সংস্থাই। তা ছাড়া মাত্র তিন বছরের চুক্তির কথা বলাতেও অনেকের অনীহা রয়েছে বলে মনে হয়। আর এক সময়ে যে সব সংস্থা মদের ডিস্ট্রিবিউটার ছিল তারা বেভকো তৈরি হওয়ার পরে অন্য ব্যবসায় চলে গিয়েছে। এখন আবার তারা এই ব্যবসায় ফিরতে চাইবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সব রকমের চেষ্টা চলছে।’’
প্রথম দিকে আবগারি দফতরের লক্ষ্য ছিল, আগামী অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হবে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে দফতর। ঠিক হয়েছে, আপাতত বেভকো যেমন চলছে তেমন চলবে। সেই সঙ্গে ডিস্ট্রিবিউটার নিয়োগের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া হবে। কত সংস্থা আগ্রহী হচ্ছে তা দেখে ধীরে ধীরে গোটা মদ পরিবেশন ব্যবস্থার গোটাটাই বেসরকারি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে কবে থেকে তা করা হবে সে ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।