গত সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যায় আবেদনের সময়। ফের বিজ্ঞপ্তি আবগারি দফতররে।
বাড়ি বাড়ি মদ পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প ভাল ভাবে চালু করতে চায় রাজ্যের আবগারি দফতর। ইতিমধ্যেই চার সংস্থার সঙ্গে কথাবার্তা পাকা হয়ে গেলেও চুক্তির আগে আরও সংস্থা যাতে অনলাইন পরিষেবায় অংশ নেয় তা নিশ্চিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার। আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অগস্ট মাসে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আগ্রহী সংস্থাদের আবেদন করতে বলা হয়েছিল। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে যত সংস্থা আগ্রহ দেখায় সেগুলির মধ্যে চারটির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত হবে বলে গত জানুয়ারিতেই সিদ্ধান্ত নেয় আবগারি দফতর। এখন ঠিক হয়েছে নতুন করে ফের আবেদন গ্রহণ করা হবে। গত সপ্তাহে এই নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে দফতর। তাতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মদের ই-পরিবেশন ব্যবস্থায় অংশ নিতে চাওয়া সংস্থারা আবেদন করে যেতে পারে। প্রসঙ্গত প্রথম দফায় এমন আবেদন জমা নেওয়া শেষ হয়েছিল ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর।
করোনা পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি সবরকমের মদ পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা রাজ্য শুরু করলেও তাতে সে ভাবে সাফল্য মেলেনি। আবগারি দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, তখন তাড়াহুড়ো করে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মদের দোকানদাররাই নিজেদের ব্যবস্থায় এলাকা ভিত্তিক ভাবে অর্ডার সরবরাহ করেছে। যদিও অর্ডার নেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের পোর্টাল থেকেই। এ বার তেমনটা না করে স্বাধীন ভাবে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থাকে অনলাইন পরিষেবা চালু করতে চাইছে দফতর। সেই কারণেই সক্ষম বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ চাওয়া হচ্ছে। সরকারি ভাবে এটিকে মদের 'ই-রিটেল' বলা হলেও আবগারি দফতরের অনেকেই এটিকে 'দুয়ারে মদ' প্রকল্প নামে ডাকছেন।
করোনাকালে বাড়ি বাড়ি অর্ডারমাফিক বিয়ার, হুইস্কি, রাম এবং দেশি মদ পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা এখনও কোথাও কোথাও চালু থাকলেও সেটা পুরোপুরি সক্রিয় নয়। এই পরিস্থিতিতে পাকাপাকি ভাবে বিভিন্ন ই-রিটেল সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে এই পরিষেবা বড় আকারে চালু করতে গত বছরের ১১ অগস্ট একটি বিজ্ঞপ্তি (NIE No. BEVCO/2021/122 dated 11/08/2021) প্রকাশ করে আবগারি দফতর। আবগারি দফতরের অধীন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন’ (বেভকো) মদের ই-রিটেল করতে আগ্রহীদের আবেদনপত্র চেয়েছিল। সেই সব সংস্থাকেই আবেদন করতে বলা হয়েছিল, যারা অনলাইনে মদ্যপ্রেমীদের বরাত নিতে পারবেন এবং বিভিন্ন খুচরো দোকান থেকে মদ কিনে ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে এই ব্যবস্থায় একটি শর্ত দেওয়া ছিল যে, মদ বিক্রি করা যাবে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বয়সের উপরের ক্রেতাদেরই।
২০২১ সালের অগস্ট মাসে প্রথমবার আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
এর পরে গত ১৯ জানুয়ারি আরও একটি নির্দেশ প্রকাশ করে রাজ্য সরকার। তাতে চারটি সংস্থাকে বরাত দেওয়ার জন্য শীঘ্রই চুক্তি করা হবে। সেই সময়ে আবগারি দফতরের এক কর্তা জানিয়েছিলেন, অগ্রিম ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অনেক আবেদন জমা পড়ে দফতরে। তার মধ্যেই বাছাই করে চারটি সংস্থাকে নির্বাচন হয়েছে। মনে করা হচ্ছে এই সংস্থাগুলি সরকারের ও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এর মধ্যে একটি কলকাতার। বাকি একটি মুম্বইয়ের, একটি বেঙ্গালুরুর ও একটি চেন্নাইয়ের সংস্থা। দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই চার সংস্থা ‘বাজিমাত ড্রিংকস’, ‘নেচারস বাস্কেট’, ‘দুনজো ডিজিটাল’ এবং ‘প্লটিনাস অ্যানালিটিকা’র নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। কোন সংস্থা কোন এলাকায় কাজ করবে, কী ভাবে অনলাইনে বরাত নেওয়া হবে বা বিক্রি হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসেই চার সংস্থার সঙ্গে সমঝোতাপত্র (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) স্বাক্ষরিত হবে। তার পরেই নিয়মকানুন সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ‘বেভকো’ ঠিক করেছে আগামী অর্থবর্ষের গোড়ার দিকে, অর্থাৎ এপ্রিল মাস নাগাদ শুরু হয়ে যাবে বাড়ি বাড়ি মদ পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা।
এখন নতুন করে আবেদন জমা নেওয়া শুরু হওয়ার পিছনে কারণ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি দফতরের কর্তারা। তবে একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে সর্বত্র একই সঙ্গে মদের ই-রিটেল চালু করতে হলে যে পরিকাঠামো দরকার সেটা চারটি সংস্থার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এর জন্যই নতুন করে আবেদন জমা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। আরও কিছু সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা গেলে এই পরিষেবা আরও শক্তিশালী হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।