ফাইল চিত্র
ভাঙড়ের ‘বন্ধুত্বে’ ভাঙন ধরাতে পারে ভাঙড়ই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম-এর সঙ্গে সিপিআইএমএল রেডস্টার-এর সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে পারে ভাঙড় আসন নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক। এই আসন নিয়ে রীতিমতো চাপে সিপিএম। ওই আসনে প্রার্থী দিতে চায় রেডস্টার। কিন্তু ছাড়তে নারাজ সিপিএম।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ে বিদ্যুতের গ্রিড তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল এই বামপন্থী দলটি। সে সময়ে সিপিএম-সহ অন্যান্য বাম দলও সমর্থন করে রেডস্টারকে। রেডস্টারের দাবি, ভাঙড়ে তাদের সংগঠন মজবুত। আর সেই কারণেই আসনটি আগামী বিধানসভা ভোটে তারা পেতে চাইছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা প্রদীপ সিংহ ঠাকুর বলেছেন, ‘‘আমরা ভাঙড়-সহ বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর জন্য সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।’’ শুধু নিজেদের প্রার্থী দেওয়ার দাবিই নয়, ভাঙড় আসনে বামফ্রন্টের সমর্থনও চেয়েছে রেডস্টার।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তারা। প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে মনোনয়ন দাখিল না করতে পারায় আদালতের দ্বারস্থ হয় রেডস্টার। হোয়াটস অ্যাপ মারফত্ ৫টি আসনে মনোনয়ন জমা দেয় তারা। আদালতের নির্দেশেই হোয়াটস অ্যাপে মনোনয়ন দাখিল হয়। ভোটে ওই ৫টি আসনেই জয় পান রেডস্টারের প্রার্থীরা। তখন থেকেই ভাঙড়ে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয় নেতৃত্বের। ঠিক হয়েছে, ভাঙড় ছাড়াও আরও কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে সিপিআই এমএল রেডস্টার। তার মধ্যে ভাঙড়ে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে সিপিএম-এর মাধ্যমে বামপন্থীদের সাহায্য চাওয়া হবে।
সিপিআই এমএল রেডস্টারের চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যেই সিপিএম আলোচনা শুরু করেছে বলেও জানা গিয়েছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, সিপিআই এমএল রেডস্টারকে আসনটি ছাড়তে নারাজ সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম-এর এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার বক্তব্য, ‘‘ভাঙড় বিধানসভার শুধু ৫টি মাত্র বুথে ওদের প্রভাব রয়েছে। খামারাইট ও মাছিমারার ৫টি বুথ ছাড়া আর কোথাও তাঁদের দলের সাংগঠনিক অস্তিত্ব কোথাও নেই। তাই ওঁদের ভাঙড় আসন ছেড়ে দেওয়ার দাবি মানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, ভাঙড় আসনে সিপিএমের রেকর্ড যথেষ্ট ভাল।’’
১৯৭২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১০টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৮ বার জিতেছে সিপিএম। তাই বাম-কংগ্রেস ও আব্বাসের দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হলেও, রেডস্টারের সঙ্গে ন্যূনতম আলোচনায় যেতে নারাজ সিপিএম। এ প্রসঙ্গে যাদবপুরের সিপিএম বিধায়ক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বাম-কংগ্রেসের জোটে ভাঙ়ড় আসনে সিপিএম প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অন্য কাউকে ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না।’’ সিপিএমের এমন মনোভাবের আঁচ পেয়ে একক ভাবেই ভাঙড় বিধানসভায় ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে রেডস্টার।
বাম-কংগ্রেস জোটের আসন রফা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জোটে আব্বাস সিদ্দিকির দল যোগ দেবে কি না, তা নিয়েও চলছে জল্পনা। তার মধ্যেই ভাঙড় নিয়ে চাপে সিপিএম।