Cyber Crime

লেক টাউনে বসে অস্ট্রেলিয়ায় ফাঁদ! অবৈধ কল সেন্টারের হদিস, ২১ জন ধৃত, উদ্ধার প্রচুর তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম

লেক টাউনের একটি অফিসে বেআইনি কল সেন্টার খুলে রমরমিয়ে চলছিল এই আন্তর্জাতিক প্রতারণাচক্র। সোমবার সেখানে হানা দিয়ে এই চক্রের পর্দাফাঁস করল পশ্চিমবঙ্গ সাইবার অপরাধ বিভাগ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৬
Share:
West Bengal Cybercrime wing arrested 21 revealing illegal call centre in Lake Town

লেক টাউনে বেআইনি কল সেন্টারের হদিস। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম। গ্রাফিক সহায়তা: এআই।

কলকাতায় বসে প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছিল সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার নাগরিকদের নিয়মিত ফোন করে ফাঁদে ফেলা হত। তাঁদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হত টাকা। লেক টাউনের একটি অফিসে বেআইনি কল সেন্টার খুলে রমরমিয়ে চলছিল এই আন্তর্জাতিক প্রতারণাচক্র। সোমবার সেখানে হানা দিয়ে এই চক্রের পর্দাফাঁস করল পশ্চিমবঙ্গ সাইবার অপরাধ বিভাগ। ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা। উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর সংখ্যক তথ্যপ্রযুক্তি সরঞ্জাম।

Advertisement

গত সোমবার, ২৪ মার্চ সাইবার অপরাধ বিভাগের আধিকারিকেরা গোপন সূত্রে লেক টাউনের ওই কল সেন্টারের হদিস পান। তাঁরা জানতে পারেন, লেক টাউন থানা এলাকার দক্ষিণদাঁড়ি রোডের একটি বহুতলে বেআইনি কল সেন্টার চালানো হচ্ছে। সংস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘অসটেনিক্স সলিউশনস’। এই কল সেন্টার চালাতেন জনৈক সমীর খান। এখান থেকে অস্ট্রেলীয়দের ফোন করা হত ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কস অফ অস্ট্রেলিয়া’-র কর্মী সেজে। তাঁদের ভুল বুঝিয়ে টাকা আদায় করা হত।

২৪ তারিখে খবর পেয়েই লেক টাউনে চলে যান সাইবার অপরাধ উইংয়ের সদস্যেরা। কল সেন্টারে কর্মরত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে চার জন মহিলা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০২২ সাল থেকে এই চক্র চালাচ্ছেন সমীর। কারা তাঁদের শিকার হয়েছেন, তাঁদের নাম, পরিচয়ও লেখা আছে সংস্থার রেজিস্টারে।

Advertisement

কী ভাবে প্রতারণা?

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ‘আই বিম’ নামের একটি সফ্‌টঅয়্যার ব্যবহার করা হত লেক টাউনের এই কল সেন্টারে। তার মাধ্যমে প্রতিটি কম্পিউটারে একটি করে ভার্চুয়াল মোবাইল ফোন ইনস্টল করা হত। তাতে থাকত বিদেশি আইপি অ্যাড্রেস (মূলত ফ্রান্স এবং ফিনল্যান্ডের)। অস্ট্রেলিয়ার যে সমস্ত নাগরিক ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কস অফ অস্ট্রেলিয়া’-র গ্রাহক, তাঁদের ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন করতেন কল সেন্টারের কর্মীরা। বলা হত, অবিলম্বে অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন গ্রহণ করতে হবে ব্যবহারকারীদের। তা না-করলে মোবাইলের নেটওয়ার্ক মিলবে না। এই কাজের জন্য গ্রাহকদের থেকে অনলাইনেই টাকা নেওয়া হত। তার পর তাঁদের বাড়িতে আর কেউ পরিষেবা দিতে যেতেন না।

লেক টাউনের দফতর থেকে মোট ২৯টি কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও, বাজেয়াপ্তের তালিকায় রয়েছে ২৩টি মোবাইল, দু’টি ল্যাপটপ, তিনটি পেনড্রাইভ, দু’টি রাউটার, দু’টি পোর্ট, একটি হার্ড ডিস্ক। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সংস্থার দু’টি রেজিস্টার, যেখানে কর্মচারীদের উপস্থিতির হিসাব লেখা থাকে। এ ছাড়া, যাঁদের ফোন করে প্রতারণা করা হয়েছে, তাঁদের নাম এবং তথ্যও উদ্ধার করা হয়েছে।

ধৃতেরা হলেন শুভজিৎ সরকার, লোকনাথ দাস, আকাশ সাউ, বিষ্ণু ঘটক, কৌশিক হাজরা, সন্দীপন পাঁজা, জুনাইদ দেওয়ান, মহম্মদ আলি, রাহুল প্রজাপতি, জিশান দেওয়ান, সন্তোষ গুপ্ত, মহম্মদ আফজ়ল আলি, আকিব আলম, চয়ন দাস, সুব্রত নন্দী, সুজিত গুপ্ত, অনন্যা পাল, খুশি প্রবীণ, শ্রেয়শ্রী গোস্বামী, শ্রেয়া চক্রবর্তী। তাঁদের মধ্যে চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে সাইবার উইং।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement