Meerut Murder Case

ড্রামে সিমেন্ট ঢেলে ‘পোক্ত’ পরিকল্পনা করেছিলেন, দু’টি ‘ছোট’ ভুলই ধরিয়ে দিল মুস্কান, সাহিলকে

গত ৩ মার্চ রাতে সৌরভকে খুন করেন মুস্কানেরা। তার পর দেহ কেটে ড্রামে ভরে তার ভিতরে সিমেন্ট ঢেলে দেন। এই পর্যন্ত সব পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছিল। কিন্তু ভুল হয় এর পর থেকেই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ১৫:২৮
Share:
Muskan Rastogi and Sahil Shukla in Saurabh Rajput’s case

সৌরভ রাজপুতকে (উপরে ডান দিকে) খুনের পর ড্রামে দেহাংশ ভরেছিলেন মুস্কান রস্তোগী এবং সাহিল শুক্ল (নীচে ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রাক্তন মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতকে খুনের পর তাঁর দেহ লোপাটের বিষয়ে ‘পোক্ত’ পরিকল্পনাই করেছিলেন স্ত্রী মুস্কান রস্তোগী এবং তাঁর প্রেমিক সাহিল শুক্ল। সৌরভের দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ড্রামে ভরে তার উপর সিমেন্ট ঢেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ছোট ছোট দু’টি ভুল করে ফেলেছিলেন মুস্কান এবং সাহিল, যা পরবর্তী সময়ে তাঁদের কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছে। এখন জেল হেফাজতে দিন কাটাতে হচ্ছে যুগলকে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৩ মার্চ রাতে সৌরভকে খুন করেন মুস্কানেরা। প্রথমে তাঁর খাবারের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘুমের ওষুধ। তা খেয়ে সৌরভ নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাঁর বুকে তিন বার কোপ মেরে খুন করেন মুস্কান। তার পর শৌচাগারে দেহটি নিয়ে গিয়ে মোট ১৫টি টুকরো করা হয়। ওই দেহাংশগুলি একটি প্লাস্টিকের ড্রামে ভরেছিলেন মুস্কান এবং সাহিল। ড্রামের মধ্যে তার পর ঢেলে দিয়েছিলেন তরল সিমেন্ট।

মুস্কানদের প্রথম ভুল— তাঁরা খুনের পরপরই শিমলায় বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন। সৌরভের দেহাংশ পড়েছিল ড্রামের ভিতরেই। নিজেদের বাড়িতে সেই ড্রাম রেখে গিয়েছিলেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, শিমলা থেকে ফিরে দেহাংশগুলি সরাবেন বলে ভেবেছিলেন মুস্কানেরা। সেখানেই ভুল করে ফেলেন। প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ড্রামে পচেছে সৌরভের দেহের টুকরোগুলি।

Advertisement

মুস্কানদের দ্বিতীয় ভুল— শিমলা থেকে ফিরে এসে তাঁরা ড্রামটিকে সরানোর জন্য কয়েক জন শ্রমিককে ডাকেন। দেহাংশের সঙ্গে সিমেন্টের ভার মিলে ড্রামের ওজন যে অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তা মুস্কানেরা বিবেচনা করেননি। দ্বিতীয় ভুলটি হয় এখানেই। শ্রমিকেরা অনেক চেষ্টা করেও ড্রামটিকে সরাতে পারেননি। উল্টে টানাটানি করতে গিয়ে ড্রামের ঢাকনা খুলে যায়। পচা দেহাংশের দুর্গন্ধ ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। ড্রামের ওজন এবং দুর্গন্ধে শ্রমিকদের সন্দেহ হয়েছিল। তাঁরা সেখান থেকে চলে যান।

এর পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন মুস্কান। তিনি দ্রুত বাপের বাড়িতে চলে আসেন। প্রথমে ভেবেছিলেন, সৌরভের বোন এবং ভগ্নিপতির ঘাড়ে খুনের দায় চাপিয়ে দেবেন। কিন্তু বাড়িতে বাবা-মায়ের প্রশ্নের মুখেই সত্যিটা স্বীকার করে ফেলেন। তার পর তাঁকে থানায় নিয়ে যান তাঁর বাবা-মা। তাঁরা দু’জনেই জানিয়েছেন, তাঁদের মেয়ে যে কাজ করেছে, তার কোনও ক্ষমা হয় না। দু’জনেই মেয়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।

মুস্কানদের শিমলা সফরের ছবি এবং ভিডিয়ো হাতে পেয়েছে পুলিশ। খুন করে বাড়িতে দেহ রেখে বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্ক বা অনুতাপের কোনও চিহ্ন ছিল না। বরং দু’জনেই নিশ্চিন্তে আনন্দ করে কাটিয়েছেন। ১৭ মার্চ শিমলা থেকে ফেরেন তাঁরা।

মুস্কানের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, সকলের সঙ্গে সব সময় ভাল ব্যবহার করতেন মুস্কান। তিনি যে এই ধরনের কাণ্ড ঘটাতে পারেন, কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। শিমলা থেকে ফেরার পর মুস্কানকে চুপ করে বসে থাকতে দেখেছিলেন ওই পড়শি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন বুঝতে পারছি, ও বসে ভাবছিল, কী ভাবে ড্রামটাকে সরানো যায়। আমি শুনেছিলাম, অনেক শ্রমিক এসেছেন। কিন্তু ড্রামটি নড়াতে পারেননি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement