চলতি আর্থিক বছরের (পড়ুন ২০২৪-’২৫) একেবারে শেষে পৌঁছে সাংসদদের বেতন বৃদ্ধি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফলে একবারে ২৪ হাজার টাকা বেতন বেড়েছে সংসদ সদস্যদের। সেই সঙ্গে সামনে চলে এসেছে একটি প্রশ্ন। দুই প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের নিরিখে কত কম বা বেশি বেতন পান ভারতীয় সাংসদেরা?
এ বছরের ২৪ মার্চ সাংসদদের বর্ধিত বেতনের কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র। এ বার সংসদ সদস্যদের ২৪ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে মোদী সরকার। অন্য দিকে চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও এ বছরের গোড়ার দিকে পাক সাংসদদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের সাংসদদের অবশ্য এ বছর এখনও পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি পায়নি। ভারতের সংসদ সদস্যদের মতোই বিভিন্ন রকমের ভাতা এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তাঁরা। তিন প্রতিবেশী দেশেরই বেতনকাঠামোর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে।
ভারতের ক্ষেত্রে সাংসদদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে কেন্দ্র। সংশোধন করা হয়েছে সাবেক সাংসদদের পেনশনও। সরকার জানিয়েছে, সাংসদদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন আইনের অধীনে এই পরিবর্তনগুলি করা হয়েছে, যা ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের অধীনে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এত দিন ভারতীয় সাংসদেরা বেতন বাবদ মাসে পেতেন এক লক্ষ টাকা। এ বার সেটাই বেড়ে এক লক্ষ ২৪ হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, ডলারের নিরিখে বেতন বাবদ তাঁরা ১,৪৪৭ টাকা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সরকার।
এ ছাড়া এ দেশের সাংসদেরা একটি দৈনিক ভাতা পেয়ে থাকেন। এর অঙ্ক দু’হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২,৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ২৯ ডলার বেড়েছে তাঁদের দৈনিক ভাতা।
প্রাক্তন সাংসদদের পেনশন ছিল মাসে ২৫ হাজার টাকা। মোদী সরকার একে বাড়িয়ে ৩১ হাজার টাকা করেছে। ফলে এখন থেকে সাবেক সাংসদেরা মাসে ৩৬২ ডলার করে পেনশন পাবেন।
এ ছাড়া পাঁচ বছরের বেশি সময়ের সাংসদদের অতিরিক্ত পেনশন দিয়ে থাকে সরকার। আগে এর অঙ্ক ছিল প্রতি বছরের জন্য দু’হাজার টাকা। নতুন নিয়মে সেটা বেড়ে ২,৫০০ টাকা হয়েছে। এই হিসাবে বছরে পেনশন বৃদ্ধি পাচ্ছে ২৯ ডলার করে।
সাংসদদের বেতন, ভাতা এবং পেনশন কেন বৃদ্ধি করা হল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন্দ্র। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাতে আইনপ্রণেতারা জীবনধারণ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার।
পাকিস্তানের শাহবাজ় শরিফ সরকার অবশ্য সাংসদদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে এ বছরের গোড়ার দিকে একটি বিল পাশ করে। সেখানেই ১৩৮ শতাংশ বেতন বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। বিলটি অবশ্য এখনও প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি।
নতুন আইনে ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’র (পাকিস্তানের সংসদের নাম) সাংসদদের বেতন ২ লক্ষ ১৮ হাজার পাক টাকা থেকে বেড়ে ৫ লক্ষ ১৯ হাজার পাক টাকা করতে চলেছে শাহবাজ় সরকার। অর্থাৎ, বছরে ১,৮৫২ ডলার করে বেতন পাবেন এক এক জন পাক সাংসদ।
ভারতীয় সাংসদদের মতোই পাক আইনপ্রণেতারা বেশ কিছু ভাতা এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। নতুন আইনে সেগুলির অঙ্কও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি। প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর বিলটি কার্যকর হলে এ ব্যাপারে মিলবে পরিষ্কার চিত্র।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’র স্পিকার আয়াজ় সাদিকের নেতৃত্বে অর্থ কমিটি ‘সংসদ সদস্যদের বেতন ও ভাতা (সংশোধন) বিল, ২০২৫’কে অনুমোদন করে। কোনও রকম বিরোধিতা ছাড়াই সেটি পাশ হয়। দেশের আর্থিক দুরবস্থার মুখে এ হেন বিল আনায় দেশের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে শরিফ সরকার। যদিও ফেডারেল সচিবদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনপ্রণেতাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে বলে যুক্তি দিয়েছে ইসলামাবাদ।
বর্তমানে বাংলাদেশের সাংসদেরা প্রতি মাসে বেতন বাবদ পান ৫৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা। অর্থাৎ, মাত্র ৪৫৫ ডলার। এ ছাড়া বিনামূল্যে সরকারি আবাসনে থাকতে পারেন তাঁরা। নিখরচায় সেখানকার বিদ্যুৎ, গ্যাস, জল এবং টেলিফোন ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে তাঁদের।
এ ছাড়া বাংলাদেশের সাংসদেরা অফিস খরচ, পরিবহণ ভাতা, ভ্রমণ ভাতা এবং বিনোদন ভাতা বাবদ পান যথাক্রমে ১৫ হাজার, ৭০ হাজার, ১২ হাজার ৫০০ এবং পাঁচ হাজার টাকা। ডলারের নিরিখে অঙ্কটা ১২৩, ৫৭৮, ১০৩ এবং ৪১ বলে জানা গিয়েছে। নির্বাচনী উন্নয়ন এবং দাতব্য তহবিল বাবদ আরও পাঁচ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা ঢোকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে। অর্থাৎ, এই বাবদ আরও ৪,১৩২ ডলার পান তাঁরা।
সরকারের থেকে বাংলাদেশি সাংসদেরা আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেগুলি হল, টেলিফোন বিল, ধোপার খরচ এবং গৃহস্থালির বিভিন্ন সামগ্রী কেনার ভাতা। গত বছরের অগস্টে গণ অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে ‘জাতীয় সংসদ’ ভেঙে দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। বর্তমানে সেখানে রয়েছে অন্তর্বর্তিকালীন সরকার।
শুধুমাত্র সাংসদদের মাসিক বেতনের দিক থেকে বিচার করলে সবচেয়ে বেশি টাকা পাবেন পাক আইনপ্রণেতারা। নতুন আইন কার্যকর বলে তাঁদের মাসিক বেতনের অঙ্ক দাঁড়াবে ১,৮৫২ ডলার। সেখানে ভারতের সাংসদেরা পাচ্ছেন ১,৬৬৫ ডলার। আর মাত্র ৪৫৫ ডলার বেতন নিয়ে খুশি থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশের সাংসদদের।
ভারতীয় সাংসদেরা প্রতিটি অধিবেশনে (বছরে প্রায় ৯০ দিন) হাজির থাকলে দৈনিক ভাতা মিলিয়ে বছরে পাবেন অতিরিক্ত ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। মাসের হিসাবে এর অঙ্ক দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা। তখন বর্ধিত বেতনের মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকা, যা ১,৬৬৫ ডলারের সমান।
পাক সাংসদদের মতো বেতন পেতে হলে ভারতের আইনপ্রণেতাদের ১৮০ দিন পার্লামেন্টে হাজির থাকতে হবে। অর্থাৎ, সাধারণ অধিবেশনের দ্বিগুণ সময় ধরে চলতে হবে সাংসদ, যা সম্ভব নয়।
এখানে আরও একটি বিষয় নজর করার মতো। ডলারের নিরিখে ভারতীয় টাকার দাম অন্য দুই প্রতিবেশী দেশের থেকে অনেক কম। বর্তমানে ৮৫.৭১ টাকায় এ দেশে মিলছে এক ডলার। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এটি ২৮০ টাকা। আর ১২১ বাংলাদেশি টাকার বিনিময়ে মিলবে এক ডলার। ফলে এই দুই দেশে দৈনন্দিন খরচও বেশি।