রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কেসি বেণুগোপাল। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গান্ধীর সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে আসছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা। তাই স্বাভাবিক কারণেই ঝুলে রইল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা। সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাংলার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কথা বলেন রাহুলের ঘনিষ্ঠ নেতা এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল। এ ছাড়াও নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মত বিনিময় করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গুলাম মির। সেই বৈঠকেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে ‘প্রাক্তন’ বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই বাংলা কংগ্রেসের নেতাদের ধারণা ছিল, মঙ্গলবার রাহুল এবং এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সভাপতি নিয়ে কোনও পাকাপাকি সিদ্ধান্তের কথা জানা যাব।
কিন্তু কেরলের ওয়েনাড়ে মঙ্গলবার ভোরে ধস নেমে মৃত্যু হয়েছে ১০৬ জনের। ২০১৯ সালে আমেঠী থেকে পরাজিত হলেও, ওয়েনাড় থেকেই সাংসদ হয়েছিলেন রাহুল। আবার ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে মা সনিয়া গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া রায়বেরেলী ও নিজের কেন্দ্র ওয়েনাড়ে ভোটে লড়াই করেছিলেন তিনি। দু’টি আসনে জয়ী হলেও ওয়েনাড়ের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন রাহুল। কিন্তু মঙ্গলবার ওয়েনাড়ের ঘটনার পর ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে লোকসভার অধিবেশনও চলছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতার দায়িত্বও এখন রাহুলের কাঁধে। তেমনই, এআইসিসি সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও রাজ্যসভার দলনেতা হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন। তাই সারাদিন অপেক্ষার পরেও তাঁদের দেখা পাননি বাংলার নেতারা। তাই বঙ্গ কংগ্রেসের বেশির ভাগ নেতাই কলকাতায় ফিরছেন।
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন যুব কংগ্রেসের সহসভাপতি রোহন মিত্র বলেন, ‘‘রাহুলজির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি ঠিকই। কিন্তু আমরা কেসি বেণুগোপালকে সংগঠন নিয়ে আমাদের কথা বলেছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। আশা করব দ্রুতই সংগঠন নিয়ে রাহুলজি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বৈঠক নয়, বাংলার নেতারা রাহুলের সঙ্গে লোকসভা ভোটে ভাল ফলের পর দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যস্ত থাকায় দেখা হয়নি। তবে এআইসিসি নেতাদের সঙ্গে আমাদের যে বৈঠক হয়েছে, তা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলেই আমরা মনে করি।’’
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস সূত্রে খবর, মূলত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দৌড়ে রয়েছে চার জন নেতার নাম। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাগমুণ্ডির প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো। অধীর ঘনিষ্ঠেরা তাঁকেই সভাপতি হিসাবে চাইছেন বলেই সূত্রের খবর। এ ছাড়াও কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক শুভঙ্কর সরকারও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দৌড়ে রয়েছেন। পাশাপাশি, আরও দু’টি নাম ভেসে রয়েছে। ২০১৫ সালে সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুস সাত্তার এবং উত্তরবঙ্গের কংগ্রেস নেতা তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। সোমবারের বৈঠকে এই চার জনের পাশাপাশি, কোনও কোনও নেতা-নেত্রী বর্ষীয়ান রাজনীতিক প্রদীপ ভট্টাচার্যর নামও কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হিসাবে দাবি করেছেন বেণুগোপালের কাছে। এই পাঁচ জনের মধ্যে কেবলমাত্র প্রদীপেরই সভাপতির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন তিনি প্রয়াত নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। আবার ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ছিলেন তিনিই। এখন দেখার এআইসিসির শীর্ষ নেতৃত্ব কাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন।