মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বৃহস্পতিবার তিনি যাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে কেলগ কলেজের কর্মসূচিতে যোগ দিতে। তিনি যাবেন শুনে উৎসাহ তুঙ্গে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচির বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কোনও প্রবেশ মূল্য নেই। তবে অক্সফোর্ডের ‘রেজিস্টার্ড আইডি’ থেকে নাম নথিভুক্ত করাতে হবে। তারও এমন হিড়িক পড়েছে যে, বুধবারের মধ্যে নথিভুক্তিকরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে আর জায়গা নেই, এমনই শোনা গেল।
যেমন শোনা গেল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে আরজি কর প্রসঙ্গ তুলতে পারেন কেউ কেউ। যা শুনেছেন মমতা নিজেও। কিন্তু তিনি ভড়কাচ্ছেন না তো বটেই, উল্টে রণংদেহি মেজাজে। বুধবার দুপুরে টেমস নদীর পারে হাঁটতে হাঁটতে আনন্দবাজার ডট কমকে বলে দিলেন, ‘‘ওরা বল করলে আমিও ব্যাটিং শুরু করব! ছক্কা মারব। ওরা কি ভেবেছে আমি তৈরি হয়ে আসিনি? নথি আমার কাছেও আছে। আমিও জবাব দিতে জানি।’’
বস্তুত, এমন একটা উদ্যোগ যে নেওয়া হচ্ছে মমতার কানে সে কথা কলকাতাতেই পৌঁছেছিল। গত লোকসভা ভোটে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। ফলে মমতা তথা তৃণমূলের খবরের ‘সূত্র’ যথেষ্ট জোরালো। যেমন জোরালো তাঁর জবাব দেওয়ার প্রস্তুতিও। আশা করা যায় ব্যাট-বলের লড়াই জমবে। দর্শক হিসাবে থাকবেন সত্যিকারের ব্যাট-বলের কারবারি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার রাতে (স্থানীয় সময়) সৌরভ পৌঁছোচ্ছেন লন্ডনে। বৃহস্পতিবার মমতার সঙ্গেই তিনি যাবেন কেলগ কলেজে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা (স্থানীয় সময়) নাগাদ লন্ডন থেকে সড়কপথে মমতা রওনা দেবেন অক্সফোর্ডে। সৌরভ তাঁর সঙ্গেই যাবেন, না অন্য কোনও গাড়িতে, তা এখনও ঠিক হয়নি।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বেলা ১টা (স্থানীয় সময়) নাগাদ পৌঁছোনোর কথা। মূল অনুষ্ঠান কেলগ কলেজের প্রেক্ষাগৃহে বিকেল সাড়ে ৫টায়। মাঝখানে চার ঘণ্টার মতো সময় অক্সফোর্ডের বিভিন্ন মাইলফলক মমতাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন কর্তৃপক্ষ। যার শেষটি হল গ্রন্থাগার। সেখানে মমতা-সহ মাত্র পাঁচ জনের প্রবেশাধিকার রয়েছে। গ্রন্থাগার থেকে সোজা কেলগ কলেজের মূল প্রেক্ষাগৃহে।
মমতার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম থেকেই জলঘোলা করার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজের প্রসিডেন্ট তথা অধ্যাপক জোনাথন মিচি। যিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর। দিন দুয়েক আগে তাঁকে লেখা একটি লম্বা চিঠি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। চিঠিতে কেন মমতাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো উচিত নয়, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিবরণ-কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। চিঠির ভাষা ‘রাজনৈতিক এবং পরিচিত’। উল্লেখযোগ্য, চিঠিটি কারা লিখেছেন, তাঁদের নামের কোনও উল্লেখ সেখানে নেই। শুধু বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডে আরজি করের প্রাক্তনীদের সংগঠন। সেই চিঠির পাল্টা আবার সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করা হয়েছে। যাতে আরজি করের প্রাক্তন পড়ুয়াদের ব্রিটেনজাত সংগঠনের সভাপতি কমল ওঝা এবং সাধারণ সম্পাদক সোনালি গুহ লিখেছেন, যে নামে জোনাথনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে তেমন কোনও প্রাক্তনীদের সংগঠন ইংল্যান্ডে নেই। কমল-সোনালির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সংগঠনের তরফে এমন কোনও চিঠি লেখা হয়নি। আমাদের বিশ্বাস এই চিঠি অন্য কেউ লিখেছেন। আমরা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা এই ধরনের বিষয়ে নিজেদের জড়াই না। আশা করি এই বিবৃতি এটা স্পষ্ট করতে পারবে যে, আগের চিঠিটি ভুয়ো এবং আমাদের সংগঠনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই।’ চিঠিটি পাঠানো হয়েছে দুই চিকিৎসক সুকান্ত চক্রবর্তী এবং কৌশিক চাকিকে। যাঁরা আরজি করের আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন।
এই আবহে মমতার অক্সফোর্ড সফর এবং কেলগ কলেজের মূল কর্মসূচি ইতিমধ্যেই কৌতূহল এবং জল্পনা তৈরি করেছে। যা নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সম্যক অবহিত। বুধবার তিনি বলছিলেন, ‘‘কারা গোলমাল করতে চায়, কারা আরজি কর নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় আমি সমস্ত জানি।’’
অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে ‘সামাজিক উন্নয়ন: বালিকা, শিশু এবং মহিলা ক্ষমতায়ণ’ বিষয়ে বক্তৃতা করবেন মমতা। মোট এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান। প্রথমে বক্তৃতা, তার পর আলাপচারিতা হবে কেলগ কলেজে। বৃহস্পতিবার মূল কর্মসূচির আগে অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি একান্ত বৈঠকও হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। অক্সফোর্ডের কর্মসূচি সেরে বৃহস্পতিবার রাতেই লন্ডনে ফিরবেন মমতা। পরের দিন শুক্রবার তাঁর কলকাতায় ফেরার উড়ান।