গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়ার তিনটি বিল নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তৎপরতায় প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে তিনি নিশানা করেছেন কেন্দ্রকে।
এক্স হ্যান্ডলে মমতা লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি দণ্ডবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন প্রতিস্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি খসড়াগুলি পড়েছি। স্তম্ভিত হয়েছি যে, এই প্রচেষ্টার মধ্যে চুপিসাড়ে অত্যন্ত কড়া এবং কঠোর নাগরিক বিরোধী বিধি প্রবর্তনের একটি গুরুতর প্রচেষ্টা রয়েছে।’’ এর পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘আগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ছিল। তা প্রত্যাহারের নাম করে, তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) প্রস্তাবিত ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আরও কঠোর এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে, যা নাগরিকদের আরও মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’’
প্রসঙ্গত, গত ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ। তার পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র একাধিক দল ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে খোলনলচে বদলে ব্রিটিশ জমানার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন আরও কঠোর করতে সক্রিয় হয়েছে মোদী সরকার। কার্যত সেই অভিযোগের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে মমতার পোস্টে। তিনি লিখেছেন, ‘‘নতুন আইনগুলি কেবল নামে নয়, কার্যক্ষেত্রেও ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বদল আনার এই প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া উচিত।’’
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আইন বদলের জন্য কেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রীর ‘পরামর্শ’— ‘‘এই খসড়াগুলি গুরুত্ব সহকারে অধ্যয়ন করার জন্য দেশের আইন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিকদের অনুরোধ করুন। সংসদে স্থায়ী কমিটিতে যখন আলোচনা হবে আমার সহকর্মীরা বিষয়গুলি উত্থাপন করবেন। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আইনের উন্নতি করা দরকার, কিন্তু ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ববাদকে পিছনের দরজা দিয়ে দিল্লিতে অনুপ্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।’’ সূত্রের খবর, বিজেপি শিবির চাইছে, মাত্র তিন মাসের মধ্যে তিনটি বিল নিয়ে স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট পেশ করুক। সে ক্ষেত্রে আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে, এ বছরের শেষে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তিনটি বিল পাশ করিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট, কেন্দ্রের এই তাড়াহুড়োয় সায় দেবে না তৃণমূল।